শিরোনাম :

চলে গেলেন আরও এক ফায়ার ফাইটার

চলে গেলেন আরও এক ফায়ার ফাইটার
Admin
সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হওয়া ফায়ার ফাইটার গাউসুল আজমকেও বাঁচানো গেল না।

রোববার ভোর ৩টায় ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা শাহজাদী সুলতানা বলেন, এ নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মোট ১০ সদস্যের মৃত্যু হল। ডিপো থেকে উদ্ধার করা যেসব পোড়া লাশ শনাক্ত করা যায়নি, তাদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের আরও তিনজন রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে বেসরকারি ওই কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার পর একের পর এক বিস্ফোরণে তা ছড়িয়ে পড়ে। ডিপোতে থাকা রাসায়নিকের কারণে ছড়িয়ে পড়া ওই আগুন ৮৬ ঘণ্টা পর বিভিন্ন বাহিনীর চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে।

ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে প্রথমে ৪১ জনের মরদেহ উদ্ধার করে বিভিন্ন সংস্থা। ৭ জুন দুর্ঘটনাস্থল থেকে আরও দুইজনের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়।

পরদিন সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় একজন। সেদিন সন্ধ্যায় ডিপোর ভেতরে আরও দুইজনের দেহাবশেষ পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় হতাহতের বেশিরভাগই ফায়ার সার্ভিস কর্মী, ডিপোর শ্রমিক-কর্মচারী, কন্টেইনারবাহী গাড়ির চালক-সহকারী ও শ্রমিক। আহত ও দগ্ধ অনেকে এখনও চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের কারও কারও অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে আগুন লাগার ৪০ ঘণ্টা পর সোমবার সকালেও জ্বলছিল কোনো কোনো কন্টেইনার, বাতাসে উড়ছিল ধোঁয়া।

রোববার ভোররাতে মারা যাওয়া গাউসুল আজমের বাড়ি যশোরের মনিরামপুরে, বিয়ে করেছেন বছর দেড়েক আগে। ২৪ বছর বয়সী গাউসুল এবং স্ত্রী সাফিদা আক্তারের পাঁচ মাসের একটি ছেলে আছে।

এই তরুণ ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন পাঁচ বছর আগে, কাজ করতেন কুমিরা ফায়ার স্টেশনে। সীতাকুণ্ডে ওই রাতে ডিপোর আগুন নেভাতে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাই প্রথম ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন।

তার ভগ্নিপতি মিজানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ওই ইউনিটের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে হঠাৎ বিস্ফোরণ হলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন গাউসুল। সেখান থেকে সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসে।

শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেলেও সে সময় মাকে ফোন করে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেছিলেন গাউসুল।

মিজানুর জানান, তার শাশুড়িকে ফোনে গাউসুল বলেছিলেন, ”মা আমি আগুনের মধ্যে পড়ে গেছি, আমাকে বের করছে সবাই।”

শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় গাউসুলকে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়, রাখা হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। শুরু থেকেই তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল বলে জানান বার্ন ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক  সামন্ত লাল সেন।

কন্টেইনার ডিপোর আগুনে দগ্ধ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের মধ্যে বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন ফায়ার সার্ভিসের আরেক কর্মী রবিন মিয়াও (২২) । সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশনের এই কর্মী শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ছেলে রবিন বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান। বছর খানেক আগে বিয়ে করেছেন তিনি। চার বছর আগে যোগ দেন ফায়ার সার্ভিসে। আগে ধামরাই ফায়ার স্টেশনে ছিলেন, এক বছর হল বদলি হয়ে সীতাকুণ্ডে আসেন।

সীতাকুণ্ডে দগ্ধ ও আহতদের মধ্যে ঢাকায় আনা হয়েছিল মোট ১৯ জনকে। তাদের মধ্যে তিনজনকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর বার্ন ইনস্টিটিউটে থাকা বাকি ১৬ রোগীর মধ্যে গাউসুল আজম মারা গেলেন।