শিরোনাম :

অভয়নগরে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে নিম্নআয়ের মানুষের বোবা কান্না।

অভয়নগরে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যে নিম্নআয়ের মানুষের বোবা কান্না।
Admin

যশোরের অভয়নগরে লাগামহীন দ্রব্য মুল্যের বাজার নিম্ন আয়ের মানুষের বোবা কান্না। অধিক সময় করোনায় স্থবির থাকা পরিবেশ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলা দ্রব্যমূল্যের কারণে ক্ষোভে ফুঁসছেন অভয়নগরের নিম্নআয়ের মানুষ।
শ্রমঘন শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত বন্দর ও শিল্প সহর নওয়াপাড়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে চলছে ‘বোবা কান্না’। তারা বলছেন, উপার্জনের সঙ্গে মিল-অমিলের হিসাব কষতে গিয়ে আমাদের বোবা কান্না কাউকে দেখানোর উপায় নেই। সংসার চালানোই এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সামনের দিনগুলোতে এ দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে না ধরলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বোবা কান্না শেষ পর্যন্ত ক্ষোভের উদগিরণে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আগামী দিনগুলো এ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ব্যাপকভাবে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এদিকে দ্রব্যমূল্যে হঠাৎ বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে যশোর জেলা প্রশাসক মোঃ তমিজুল ইসলাম খাঁন, জানিয়েছেন, যে কোনো মূল্যে কৃত্রিম সংকট রোধে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে ও মজুদদারি কঠোরভাবে বন্ধ করতে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, শিল্প সহর নওয়াপাড়া দেশের প্রায় ২০/২৫ জেলার মানুষই জীবিকার টানে কাজ করেন। দেশের বৃহত্তম ব্যবসায়ীক শিল্প ও বানিজ্য নগর হিসাবে পরিচিত মোকাম অভয়নগরের নওয়াপাড়া। শিল্পের সঙ্গেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষাভাবে কাজ করছেন প্রায় ২লাখ মানুষ। এছাড়াও বিভিন্ন সেক্টরে রয়েছেন আরও প্রায় ১লাখ স্থানীয় ও অন্য জেলার মানুষ-জন, যাদের সিংহভাগই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের।
করোনার জন্য লকডাউন পরিস্থিতির কারণে চরম দুর্ভোগে পরতে হয়েছিল এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে। জনপ্রতিনিধি ও সরকারের তরফ থেকে পাওয়া ত্রাণের বাইরে জীবিকার মাধ্যম হারিয়ে বেশির ভাগ নিম্নআয়ের মানুষই দিন কাটিয়েছেন অবর্ণনীয় দুর্দশায়।
তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। কারণ এসব পরিবারের লোকজন মুখ খুলে কাউকে বলতেও পারেননি কিংবা হাত পাততে পারেননি। সেই লকডাউন পরিস্থিতি কাটিয়ে গত কয়েক মাসে সাধারণ জীবনে ফিরে আসার চেষ্টায় থাকা এসব নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারগুলোর জন্য কঠিন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি।
সরেজমিন ভোজ্যসামগ্রীর মুল্যে বৃদ্ধি ও হঠাৎ তেলের মুল্যে বৃদ্ধি বড়ো বাজারসহ উপজেলার সব বাজার এলাকায় গিয়ে পাওয়া গেছে এর সত্যতা।
এছাড়াও ডাল, চিনিসহ নিত্য ভোজ্যসামগ্রীর দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। এই মূল্যবৃদ্ধি আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন খোদ ব্যবসায়ীরাই। কাঁচাবাজারে ব্রয়লার মুরগির দাম ১১৫ টাকা থেকে এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০ টাকায়।
উপজেলার নওয়াপাড়া সবচেয়ে বড়োবাজার ভাংগাগেট চেংগুটিয়া বাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকার অসংখ্য ঘাটশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, করোনার মধ্যে কয়েক মাস কাজকর্ম বন্ধ ছিল। আয় ইনকাম ছিলোনা লকডাউন তুলে দেওয়ার পর এমন ভাবে দ্রব্য সামগ্রীর মুল্যে বৃদ্ধি হচ্ছে উল্টো আমাদের বেঁচে থাকায় দায় হয়ে পড়েছে। করোনায় লকডাউন সংকট না কাটতেই বাজার মূল্যে আমরা দিশেহারা।
কয়েকজন আমদানি কারক প্রতিষ্ঠানের চাকরিরত কর্মকর্তা ও কর্মিদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের বেতন দিয়েই চলতে হয়, বলতে পারেন মাপা টাকা। কিন্তু বর্তমান বাজার দরে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। কাউকে তো কিছু বলতেও পারি না। কিন্তু ক্রয়ের সক্ষমতা হারাতে বসেছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। উপার্জনের টাকায় সংসার চলেনা, আমাদের বোবা কান্না কাউকে দেখানোর উপায় নেই।
এদিকে দিন ও মাস যত ঘনিয়ে আসবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে ধারণা করছেন অনেকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্কুলশিক্ষক জানান, আমাদের অবস্থা যে কতটা করুণ তা বলে বোঝাতে পারব না। দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি হলেই সরকারের ঘুরেফিরে একটাই বক্তব্য আসে তা হলো, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে তাহলে খাদ্যের রিজার্ভ কোনো কাজে আসবে। তাই সামনে কী আছে আমাদের ভাগ্যে জানি না।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ তমিজুল ইসলাম খাঁন জানিয়েছেন, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির ব্যাপারে আমরা জেনেছি এবং ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে জরুরি সভা করে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সরকার নির্ধারিত দ্রব্যমূল্য নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এসিল্যান্ডদের মাধ্যমে জেলার পাইকারি ও খুচরা বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে এবং এ অভিযান নিয়মিত চলবে।