গত কয়েক মাসে দেশে বেড়েছে সাইবার ক্রাইম। চলতি বছর প্রথম ৬ মাসে ৮২৭ জন ভিকটিম শুধু সাইবার বুলিং অপরাধের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ৮ হাজার ৭৭০ জনকে অনলাইনের মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছে। সিটি-সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন ভিকটিম সাইবার সম্পর্কিত অভিযোগ মৌখিক ও লিখিতভাবে দিচ্ছেন। অর্থাৎ প্রতিদিন ৪০টির মতো অভিযোগ আসলে মাসে ১২০০ অভিযোগ পড়ছে, এর মধ্যে বেশির ভাগ ভিক্টিম হলেন নারীরা। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে নারীদের টার্গেট করে হ্যাকার গ্রুপ নারীদের হিডেন ইনফরমেশন কালেকশন করে তার বিনিময়ে বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিয়ে থাকে। গত ০৭/০৩/২০২২ তারিখে খুলনায় শাম্মি নামে একজন নারীর বিজনেস আইডি হ্যাক হয় এবং তার আইডি থেকে বিভিন্ন ভাবে মানুষকে হয়রানি করা হয়েছে, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে।
একই দিনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী শিকদার আল নোমানের আইডি হ্যাক হয়েছে, এ পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা হরিণটানা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এর পরের দিন ০৮/০৩/২০২২ তারিখে খুলনা সোনাডাঙ্গা এলাকায় বসবাসরত শারমিন আক্তার অমির আইডি হ্যাক করা হয়। এ বিষয়ে খুলনা সদর থানা, সোনাডাঙা থানা ও হরিণটানা থানা কর্তৃপক্ষ সহ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে সচেষ্ট রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর গত এক বছরে বাংলাদেশে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বেড়েছে। এ সময়ে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় এক কোটি। তার চেয়ে বেশি বেড়েছে মেসেঞ্জার ব্যবহারকারী। ইস্টাগ্রাম, লিংকডিনের ব্যবহারও বেড়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবস্থাপনার প্ল্যাটফর্ম নেপোলিয়নক্যাটের পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইস্টাগ্রাম, লিংকডিন সহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের প্রতি মাসের হিসাব দিয়ে থাকে পোল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান নেপোলিয়নক্যাট।
তাদের হিসেবে, এ বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার। এই সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশ। ব্যবহারকারীর মধ্যে ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ নারী এবং পুরুষ ৬৯ দশমিক ১ শতাংশ। ব্যবহারকারীদের মধ্যে ১৮ থেকে ২৪ বয়সীরাই সবচেয়ে বেশি।
২০২০ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৮৪ লাখ ৭৫ হাজার (জনসংখ্যার ২২ দশমিক ৩ শতাংশ)। সে হিসাবে, গত এক বছরে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৯৭ লাখ ৫৫ হাজার। এ সময় নারী ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে।
করোনার এই সময়ে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীর সংখ্যা। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে দেশে মেসেঞ্জার ব্যবহার করতেন ৯৩ লাখ ৯১ হাজার মানুষ। এক বছরে এ সংখ্যা সাড়ে চার গুণ বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার। এই সংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। মেসেঞ্জার ব্যবহারকারীদের মধ্যে পুরুষ ৬৯ দশমিক ৩ শতাংশ এবং নারী ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ।
বাংলাদেশে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৪০ লাখ ৭১ হাজার, যা জনসংখ্যার মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং নারী ৩১ দশমিক ৪ শতাংশ। এখানেও ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীর সংখ্যা বেশি, ৫৩ দশমিক ৭ শতাংশ। গত বছরের এপ্রিলে ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ২৩ লাখ ৬১ হাজার ৩০০।
পেশাজীবীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম লিংকডিন এর ব্যবহারও বাংলাদেশে বেড়েছে। এ বছরের মে মাস পর্যন্ত লিংকডিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪১ লাখ ১৭ হাজার, যা জনসংখ্যার ২ দশমিক ৪ শতাংশ। ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি। গত বছর এপ্রিলে বাংলাদেশে ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার মানুষ লিংকডিন ব্যবহার করতেন।