রাজধানী ঢাকায় গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার মেট্র্রিকটনেরও বেশি বর্জ্য তৈরি হয়। এই ব্যাপক পরিমান বর্জ্যকে সঠিক ব্যবস্থাপনা করার জন্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সুরক্ষা, তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বর্জ্য পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা রয়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। কোনো রকম সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়াই পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বাসাবাড়ি ও হাসপাতাল থেকে আবর্জনা সংগ্রহের কাজ করছেন।
রবিবার ইউএস এইড অর্থায়নে এবং কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনাল এর কারিগরি সহযোগীতায় ‘ঢাকাকলিং’ কনসোর্টিয়াম প্রকল্পের আওতায় বারসিকের উদ্যোগে হাজারিবাগের বালুর মাঠে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সাথে সমন্বয় সভায় বক্তারা এসব কথা বলে।
সভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী রূপালী বেগম বলেন, আমরা সারাদিন ময়লার মধ্যে কাজ করি কিন্তু আমাদের হাতের মুজা নাই (গ্লাপস), ড্রেস নাই, পায়ের জুতা (গামবুট) নাই। আমাদের হাত পাও কাইট্টা যায় কিন্তু আমাগো কাজ করা লাগেই। আমাগো এইগুলা দরকার।
কমিউনিটি সদস্য মুর্শিদা বলেন, আমরা একটা ময়লার সেকেন্ডারীর স্টেশনের পেছনে থাকি। সেখানকার ময়লা পানি, দুর্গন্ধ আমাদের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। বস্তির বেশির ভাগ বাচ্চারা অসুস্থ থাকে প্রায় সারাবছর। আমরা চাই এই এসটিএস যেন সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা হয়।
পরিচ্ছন্নতা কর্মী জাহিদা বেগম বলেন, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য কোন বাথরুম নাই, হাত ধোয়ার জায়গা পর্যন্ত নাই। যেকারণে তারা অসুস্থ হয় আর তাদের খোজ নেয়ারও কেউ থাকেনা। তিনি বলেন, হাতে পায়ে সকল পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের অসংখ্য কাটার দাগ। তাদের কেটে গেলেও প্রাথমিক চিকিৎসা দেবারও কেউ নেই। অথচ তারা এই শহরকে কত কষ্ট করে পরিস্কার করে।
সমন্বয় সভার অতিথি সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ সেলিম মিয়া বলেন, আমরা ডাস্টবিন ধারণা থেকে বের হয়ে এসেছি। আমরা আর উন্মুক্ত জায়গায় ময়লা রাখতে চাই না। সরকার বর্জ্যকে সঠিক ব্যবস্থাপনার জায়গায় নিতে বদ্ধ পরিকর। সকল বর্জ্যকে আমরা পৃথকীকরণের মাধ্যমে তা নানামাত্রিক কাজে ব্যবহার করতে চাই। আর পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সকল ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যাবতীয় নির্দেশনা দেয়া থাকে এবং সরকারী নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীরা সকল সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন ইজারাদারদের এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বলা থাকে। তারা যদি পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী না প্রদান করে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি আরও বলেন, পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাও জরুরি দাবি। তাদেরকে সুস্থ রাখতে পারলেই আমরা সকল নাগরিকদের সুস্থ রাখতে পারবো।
সিবিও উপদেষ্টা ইব্রাহীম রানার সভাপতিত্বে ও সাবিনা নাঈমের সঞ্চালনায় সমন্বয় সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, অঞ্চল ৩-এর, সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ সেলিম মিয়া, বারসিকের প্রজেক্ট ম্যানেজার ফেরদৌস আহমেদ, বারসিকের কমিউনিটি মবিলাইজার সাবিনা নাঈম, কামরুন নাহার, সিবিও নেতা রুমা আক্তার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী রুপালী বেগম, ইজারাদার সেলিম প্রমূখ।