বছরজুড়ে ওমরা করা যায়। ওমরার জন্য নির্ধারিত কোনো সময় বাঁধা নেই। তবে যারা চলতি হজ মৌসুমে হজ পালনে পবিত্র নগরী মক্কায় যাচ্ছেন, তারা নিজ নিজ দেশ থেকে ওমরার ইহরাম বেঁধেই যাচ্ছেন। তারা কীভাবে ওমরা সম্পাদন করবেন?
বছরজুড়ে ওমরা পালন করা যায়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হজের কয়েকটি মাস আছে সুবিধিত।’ হজের নির্ধারিত মাস তিনটি হলো- শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী যারা হজে তামাত্তু ও কিরান আদায় করবেন, তাদের জন্য হজের আগে একটি ওমরা করার নির্দেশ রয়েছে। এ ওমরাকে হজের প্রশিক্ষণও বলা চলে। ওমরা সম্পাদনে সুনির্দিষ্ট কাজের মধ্যে ২টি ফরজ ও ২টি ওয়াজিব রয়েছে। ওমরার এ ৪ কাজ ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো-
১. ইহরাম বাঁধা (ফরজ)
মিকাত (ইহরাম বাঁধার স্থান) থেকে কিংবা নিজ নিজ দেশ থেকে বিমানে ওঠার আগে ইহরাম বাঁধা। ওমরার জন্য পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার লক্ষ্যে গোসল করা। সুযোগ না থাকলে অজু করা। এরপর সেলাইবিহীন দুই কাপড় পরে ইহরাম বাঁধা এবং ২ রাকাত নফল নামাজ আদায় করা। এরপর ওমরার নিয়ত ‘লাব্বাইক ওমরাতান’ উচ্চারণ করা। তারপর তিনবার তালবিয়া পাঠ করা-
তালবিয়া
لَبَّيْكَ ا للّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ اِنَّ الْحَمدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ
তালবিয়ার উচ্চারণ
‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক্, লা শারিকা লাক।’
তালবিয়ার অর্থ
‘আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত! আপনার ডাকে সাড়া দিতে আমি হাজির। আপনার কোনো অংশীদার নেই। নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা ও সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার। আপনার কোনো অংশীদার নেই।’
২. কাবা শরিফ তাওয়াফ করা (ফরজ)
ওমরার দ্বিতীয় ফরজ কাজ হলো বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করা। হাজরে আসওয়াদের কোনা থেকে শুরু করে ৭ প্রদক্ষিণ ও ৮ ইস্তিলামে তাওয়াফ সম্পন্ন করা। তাওয়াফের সময় রমল ও ইজতিবা করা।
রমল কী?
তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করের সময় পুরুষদের জন্য রমল করা। রমল হলো মুজাহিদের মতো বীর দর্পে দুই কাঁধ ও শরীর দুলিয়ে বাইতুল্লাহ প্রদক্ষিণ করা। তবে নারীদের জন্য রমল করার বিধান নেই।
ইজতিবা কী?
৭ চক্করেই ইজতিবা করা। ইজতিবা হলো- ইহরামের কাপড় এক মাথা বুকের ওপর থেকে বাম কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে নিয়ে ডান বগলের নিচ দিয়ে ঘুরিয়ে বুকের ওপর দিয়ে অপর মাথাটি বাম কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে ফেলা।
ইস্তিলাম কী?
বাইতুল্লাহ তাওয়াফের সময় প্রত্যেক প্রদক্ষিণের শুরুতে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন অথবা স্পর্শ করে তাওয়াফ শুরু করা। আর তা সম্ভব না হলে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে তাওয়াফ শুরু করা। এরপর শেষ চক্কর সমাপ্ত করতে হাজরে আসওয়াদে পৌঁছলে পুনরায় হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে তাওয়াফ সম্পন্ন করা।
মাকামে ইবরাহিমে নামাজ
তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহিমে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা। নারীরা মসজিদে হারামের নির্ধারিত স্থানে নামাজ আদায় করবে।
জমজমের পানি পান
মাকামে ইবরাহিমে নামাজ আদায় করে মাতআ’ফের শেষ প্রান্তে মসজিদে হারামের সঙ্গে সংরক্ষিত স্থানে স্থাপিত জমজমের পানির পাম্প থেকে চাহিদা মতো পানি পান করা।
৩. সাফা-মারওয়ায় সায়ী করা (ওয়াজিব)
সাফা এবং মারওয়া নামক পাহাড়দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী (আসা-যাওয়া) করা। কোরআনে সাফা-মারওয়া দুইটি পাহাড়ের কথাই এসেছে। যেহেতু আগে সাফা পাহাড়ের কথা এসেছে তাই সাফা পাহাড় থেকে সায়ী শুরু করা হয়।
উল্লেখ থাকে যে, ‘উভয় পাহাড়ের মর্ধবর্তী স্থানে সবুজ বাতি দ্বারা চিহ্নিত স্থানে পুরুষরা একটু দ্রুত পায়ে দৌড়ের ভঙ্গিতে অতিক্রম করবে। কারণ এ স্থানে হজরত হাজেরা রাদিয়াল্লাহু আনহা দৌড়ে অতিক্রম করেছিলেন। তবে নারীরো এ স্থানে দৌড়াবে না।
৪. মাথা মুণ্ডন করা (ওয়াজিব)
সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয় সায়ী করার পর মাথার চুল মুণ্ডন করা আবশ্যক। মাথার চুল মুণ্ডানোর মাধ্যমেই ওমরা পালনকারীরা ইহরাম থেকে নিজেদেরকে হালাল করবেন। আর এর মাধ্যমে সম্পাদন হবে ওমরা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ নিয়মে ওমরা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।