অতিবৃষ্টিতে উজানের ঢলে তলিয়েছে সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার প্রতিটিই। ফলে প্রায় ২৯ লাখ মানুষ এখন বন্যার দুর্ভোগে রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ছয়টি উপজেলা প্লাবিত হওয়ার পর পানি বেড়ে শুক্রবার বিকাল থেকে তলিয়েছে বাকি পাঁচটি উপজেলাও। জেলার সঙ্গে দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নের পর এখন ১১ উপজেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। বিদ্যুৎও নেই৷ বৃহস্পতিবার বিকালে সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে নতুন করে জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা ও জগন্নাথপুর প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, “আমার উপজেলা সদরসহ প্রতিটি গ্রামের বসতবাড়ি এখন পানির নিচে। মানুষ অসহায়। তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি খাদ্য, চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন। সড়ক ও টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে আমরা অসহায় মানুষদের সহায়তা দিতে পারছি না।” ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রোকন বলেন, “শুক্রবার বিকেল থেকে আমার উপজেলা সদরসহ গ্রামের বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ক্ষয়-ক্ষতির দিকে না চেয়ে মানুষ নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। আমরা জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসনের সহায়তায় কাজ করছি।” দিরাই পৌরসভার মেয়র বিশ্বজিৎ রায় বলেন, “দেখতে দেখতে আমাদের উপজেলায়ও পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার এই ভয়াবহতায় আমরা আতঙ্কিত।” দিরাই উপজেলায় শুক্রবার বিকেল থেকে সেনাবাহিনী উদ্ধারে নেমেছে। জগন্নাথপুর শাহজালাল মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন বলেন, “আমাদের উপজেলা নিমজ্জিত হয়ে গেছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশু নিয়েও মানুষ উদ্বিগ্ন। আমার কলেজে অনেক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।” শাল্লা উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত সেন বলেন, “আমাদের উপজেলা প্লাবিত হয়ে গেছে। পানি হু হু করে বাড়ছে, বাড়ছে মানুষের হাহাকার। ত্রাণ ও প্রাণ দুটোই বাঁচাতে হবে।” ঘর তলিয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার দুর্গত মানুষরা স্থানীয় স্কুল-কলেজে আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে তারা ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না বলেও জানিয়েছেন। সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “সরকারি ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও প্রশাসন উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বন্যা মোকাবেলা করতে হবে।”