সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সহায়-সম্বলহীন মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বানের পানি নামতে শুরু করলেও আশ্রয় কেন্দ্র থেকে সবাই এখনও বাড়িঘরে ফিরতে পারেনি। যারা ফিরতে শুরু করেছেন, তাদের যুদ্ধ শুরু হয়েছে নতুন করে সংসার গোছানোর। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা জানান, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবং রোদ থাকায় বৃহস্পতিবার থেকে পানি কমছে। তবে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে এখনও বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাতে তিনি বলেন, “আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জের নদনদীর পানি বাড়ার আশঙ্কা নাই। তাই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।” সুনামগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল তুহিন বলেন, “বন্যার পানি কমলেও সুনামগঞ্জ জেলা শহরের অর্ধেক এলাকার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি এখনও নিমজ্জিত। নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে পানি নামলেও হাওরের তীরবর্তী এলাকাগুলো থেকে বিলম্বে পানি নামছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না।“ তিনি আরও বলেন, “বন্যায় মানুষের ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এই ক্ষতির কথা বাদ দিয়ে মানুষ এখন নতুন করে ঘুরে দাড়ানোর সংগ্রাম শুরু করেছে। এই ঘুঁরে দাড়ানোর জন্য সরকারি-বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজন।” সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন তালুকদার বলেন, “এবারের বন্যায় একতলা বিশিষ্ট, টিনসেড ও কাঁচাঘরের বাসিন্দাদের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাড়িতে ফিরে দেখছেন সব কিছু বানের জলে ভেসে গেছে। বিছানা, বালিশ, কাপড়, মূল্যবান কাগজপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।” “বন্যা পরবর্তী ভয়াবহ দুর্যোগ সামনে আসছে।” বলে উল্লেখ করেন তিনি। সুনামগঞ্জ সদর উপজেরার সদরগড় গ্রামের আব্দুন নূর বলেন, “বন্যায় ঘরবাড়ি ডুবে গেলে আমি সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে নৌকায় আশ্রয় নেই। বাড়িতে গিয়ে দেখি পানি কমলেও কাঁচা ঘরের মেঝেতে কাঁদা। ফলে পানি কমলেও আমার কষ্ট লাঘব হচ্ছেনা। তাই আবার নৌকায় ফিরে এসেছি।” একই গ্রামের চামেলি বেগম বলেন, “বন্যায় আমাদের বাসন কোসন, হাস মোরগ ভাসিয়ে নিয়েছে। ধানচাল নষ্ট করে গেছে। এখন বাড়ি ফিরে মনটা খারাপ হয়ে গেছে। এখন রান্নাবান্নার লাকড়ি সংগ্রহসহ নানা দুর্ভোগের মধ্যে আছি।
এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “জেলার ১১ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এ পর্যন্ত ৪ ফুটের বেশি পানি কমছে। তবে মানুষ এখনো আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন। যাদের বাড়িঘর বন্যায় বিধ্বস্ত হয়েছে তাদের বসতঘর স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে থেকে সবধরনের সহযোগিতা পাবেন। “এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দুর্গত মানুষদের সহায়তা অব্যাহত রাখতে আমরা প্রতিটি উপজেলায়, ইউনিয়নে ও ওয়ার্ডে ত্রাণ পৌছে দিচ্ছি। বন্যা পরবর্তী রোগ বালাই মোকাবেলায়ও আমরা প্রস্ততি নিয়ে রেখেছি।”