শিরোনাম :

বাইকে কড়াকড়ি: ঈদযাত্রায় কমেছে মৃত্যু

বাইকে কড়াকড়ি: ঈদযাত্রায় কমেছে মৃত্যু
Admin

এবার ঈদযাত্রার আগে ও পরে সাত দিন মহাসড়কে মোটরসাইকেল চলাচল সীমিত করার পর সড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে।

চলতি বছর ঈদুল ফিতরে ঈদযাত্রা ও ফিরতি পথে যত মানুষ সড়কে মারা গিয়েছিলেন, তার তুলনায় ঈদুল আজহায় সংখ্যাটা বেশ কম।

অবশ্য কড়াকড়ির পরও সড়কে দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা গেছেন, তাদের প্রায় অর্ধেক বাইক আরোহী।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন একত্রিত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে। সেটি বিশ্লেষণ করে এ বিষয়টি জানা গেছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, সড়কে মৃত্যু কমার পেছনে এবার মূল কারণ মহাসড়কে বাইক সীমিতকরণ। তিনি জানিয়েছেন, চার চাকার যানবাহনের তুলনায় দুই চাকার যানবাহনে ঝুঁকি প্রায় ১৭ গুণ বেশি।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে ঈদুল আজহার আগে-পরে ১০ দিনে দেশে ১৯১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১৬ জন নিহত হয়েছেন।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১০২ জন মারা গেছেন বাইক দুর্ঘটনায়, যা মোট মৃত্যুর ৪৭ দশমিক ২২ শতাংশ।

দুই মাস আগে ঈদুল ফিতরের আগে-পরে ১৪ দিনে সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছিল ২৮৩টি। তখন সারা দেশে মৃত্যু হয় ৩৭৬ জনের। ওই মৃত্যুর মধ্যে বাইক আরোহী ছিলেন ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৪১ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

এবার ঈদযাত্রার আগে-পরে সাত দিনের জন্য মহাসড়কে বাইক নিষিদ্ধ হলেও পরে পুলিশ ‘মানবিক কারণ দেখিয়ে’ পাসের ব্যবস্থা করে। এই পদ্ধতি চালুর পর পাস ছাড়াই বিপুলসংখ্যক বাইকার পথে নেমেছেন, আর পুলিশ মহাসড়কে পাস পরীক্ষা করেছে- এ বিষয়টি দেখা যায়নি।

ঈদে বাড়ি ফেরার পথে বা পরে শহরমুখী উল্টো স্রোতে প্রতিদিনই বাইক দুর্ঘটনার খবর আসতে থাকে, যদিও সংখ্যায় এটি আগের ঈদের তুলনায় কিছুটা কম।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদযাত্রায় যাওয়া-আসা মিলে মৃত্যুর সংখ্যা গত ঈদযাত্রার থেকে অনেক কম। গত ঈদে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল।’

বাইকে কড়াকড়িই এর কারণ কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘শুধু বাইক না, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে হাইওয়েতে দুর্ঘটনা কম হয়েছে। আবার বাইক দুর্ঘটনাও কম হয়েছে। বাইকের সঙ্গে বাস-ট্রাক, নসিমন-করিমনের সংঘর্ষও কম হয়েছে।’

বুয়েটের অধ্যাপক হাদিউজ্জামান মনে করেন, মৃত্যু কমার কারণ বাইক সীমিত করা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সড়ক অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা মোটরসাইকেলবান্ধব না। আমাদের সড়কে লেনভিত্তিক গাড়ি চলে না। একই সড়কে ভারী যানসহ সব গাড়ি চলে। চার চাকার যানবাহন থেকে দুই চাকার যানবাহনে ঝুঁকি প্রায় ১৭ গুণ।’

ঈদযাত্রায় বাইকে কড়াকড়ি আরোপের পর অবশ্য দীর্ঘ যানজট, বাসের টিকিটের জন্য হাপিত্যেশ, ট্রেনের ছাদে চড়ার চিত্র ফিরে এসেছে। আবার বাসে নির্ধারিত ভাড়ার বেশি আদায়ের অনিয়ম ফিরে এসেছে।

এসব ভোগান্তির জন্য অধ্যাপক হাদিউজ্জামান দায়ী করছেন পরিকল্পনার অভাবকে। তিনি বলেন, ‘মহাসড়কে মোটরসাইকেলের যে নিষেধাজ্ঞা, এটা একেবারেই শেষ পর্যায়ে দেয়া হয়েছে। তারা যদি নিষেধাজ্ঞা দিতেই চাইত, দুই মাস আগে বলা উচিত ছিল। যারা ঈদে বাড়ি ফেরেন তাদের একটা পরিকল্পনা থাকে।

‘হঠাৎ করে বলা হলো মোটরসাইকেল বন্ধ। গত ঈদের তথ্য-উপাত্ত থেকে আমরা বুঝি ৩০ লাখ ঢাকাবাসী মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরেছেন। তার মানে মোটরসাইকেল বন্ধ মানে ৩০ লাখের জোগানের একটা ঘাটতি হবে। এই বিকল্প কিছু দেয়া হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ঈদে আমাদের যে মানুষ ঢাকা ছাড়ে তার ৫০ শতাংশ হ্যান্ডেল করার মতো আমাদের সক্ষমতা আছে। বাকি ৫০ শতাংশের সক্ষমতা নেই। মোটরসাইকেল হঠাৎ বন্ধ করে দেয়ায় মানুষ পশুবাহী ট্রাক, ট্রেনের ছাদে উঠেছে।’

এবারের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে আগে-পরে ঈদের ছুটিকে দীর্ঘায়িত করা, শিল্প-কারখানাকে ধাপে ধাপে ছুটি নিশ্চিত করার তাগিদ দেন এই পরিবহন বিশেষজ্ঞ। বলেন, শিল্প ও শ্রম মন্ত্রণালয়কে এটা তদারক করতে হবে।