দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় টেকনাফ মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে ২০ বছর এবং তার স্ত্রী চুমকি করণকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছে আদালত।
এছাড়া প্রদীপকে ৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ও চুমকিকে ৪ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে, অনাদায়ে প্রদীপকে ২ বছর ৮ মাস ও চুমকিকে ২ বছর ৯ মাস কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালত বুধবার বেলা সোয়া ১১টায় এ রায় ঘোষণা করেন।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘অভিযোগপত্র গঠনের পর আদালত ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।’
এর আগে ১১টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মাধ্যমে তাদের আদালতে তোলা হয়।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পান ওসি প্রদীপ। এ বছরের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালত এ রায় দেয়।
২০২০ সালের ২৩ আগস্ট জ্ঞাত আয়বহিভূর্ত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন, মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২-এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন।
মামলায় এই দম্পতির বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।
মামলা দায়েরের পর ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ ও মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত ওসি প্রদীপকে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় তিনি আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন। সে সময় থেকে প্রদীপের স্ত্রী চুমকি করণ পলাতক।
এর পরের বছরে ২৬ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন রিয়াজ উদ্দিন। অভিযোগপত্রেও এই দম্পতির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৫৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।
চুমকি করণের নামে পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরে বাড়ি, ৪৫ ভরি সোনা, একটি কার, একটি মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব এবং কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাট থাকার কথা বলা হয় অভিযোগপত্রে। তার মোট ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পায় দুদক। অভিযোগপত্রে ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়। একই বছরের ১ সেপ্টেম্বর আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে।
২০১৮ সালে প্রদীপ কুমার দাশ ও চুমকির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করে দুদক। এর পরের বছরের ৯ এপ্রিল তাদের সাত কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদ বিবরণী জমার নির্দেশ দেয় সংস্থাটি। ১২ মে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২-এ পৃথক সম্পদ বিবরণী জমা দেন এই দম্পতি।
অভিযোগপত্র গ্রহণের পর ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ-চুমকি দম্পতির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে মামলায় বিচার শুরুর আদেশ দেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মুন্সী আব্দুল মজিদের আদালত।
এরপর চলতি বছরের ২৩ মে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মুন্সী আবদুল মজিদের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে চুমকিকেও কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। সর্বশেষ ১৮ জুলাই এই মামলার যুক্তিতর্ক শেষে বুধবার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করা হয়।