শিরোনাম :

পদ্মা সেতু চালুর পর শীতনিদ্রায় বরিশালের আকাশপথ

পদ্মা সেতু চালুর পর শীতনিদ্রায় বরিশালের আকাশপথ
Admin

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে যাত্রী কমছে বরিশালের আকাশপথে। এরই মধ্যে বেসরকারি এয়ারলাইনস নভো এয়ার এ রুটে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। ফ্লাইট কমিয়েছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে উপযোগিতা হারাতে পারে ৩৪ বছরের পুরাতন বিমানবন্দরটি। অবশ্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও দেশি এয়ারলাইনসগুলো বলছে, এ সংকট সাময়িক। তাদের আশা, আগামী শীত মৌসুমে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে কেন্দ্র করে জমে উঠবে ফ্লাইট চলাচল।

বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো বলছে, এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গরম আর রোদের দাপট থাকায় এ সময়টিকে পর্যটনের জন্য অনুপযুক্ত মনে করা হয়। যেহেতু এ সময়ে পর্যটকদের আনাগোনা কম থাকে, তাই স্বাভাবিকভাবে এয়ারলাইনসগুলোতে যাত্রীর চাপ‌ও কমে আসে।

তার ওপর গত এক বছরে উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েল বা এভিয়েশন ফুয়েলের দাম বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এর প্রভাব পড়েছে ভাড়ায়। অতিরিক্ত খরচের কারণে আগে যারা সময় বাঁচাতে আকাশপথ বেছে নিতেন, তাদের অনেকে অন্য মাধ্যমগুলোতে ফিরে যাচ্ছেন। এতে আকাশপথে যাত্রীর সংখ্যায় প্রতি বছর যে প্রবৃদ্ধি হতো, তা হোঁচট খেয়েছে।

অন্যদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ার কারণে সড়কপথে ভ্রমণ ও সেতু দেখার জন্য মানুষের বাড়তি আগ্রহ জন্মেছে। এই কারণে বরিশাল বিমানবন্দর ব্যবহার করা যাত্রী কমে গেছে।

আকাশ থেকে শস্যক্ষেতে কীটনাশক ছিটাতে ১৯৬৩ সালে বরিশালের বাবুগঞ্জের রহমতপুর ইউনিয়নে নির্মাণ করা হয় প্রায় ২ হাজার ফুটের রানওয়ে। সে সময় এটিকে প্ল্যান্ট প্রোটেকশন বন্দর হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

১৯৮৫ সালে এই রানওয়েটিকে বিমানবন্দরে রূপ দেয়া হয়, তবে সে সময় এখানে বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ চলাচল শুরু হয়নি। ১৯৯৫ সালের ১৭ জুলাই বেসরকারি এয়ারলাইনস অ্যারো বেঙ্গলের ঢাকা-বরিশাল রুটে প্রথম ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে বিমানবন্দরটির বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হয়। ওই বছরেরই নভেম্বর মাসে বিমানবন্দরটিতে ফ্লাইট চালু করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস।

শুরু থেকেই এ পথে যাত্রীর খরা ছিল। ২০০৬ সালে যাত্রীর অভাবে বিমানবন্দরটিতে বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৯ বছর পর ২০১৫ সালের ৯ এপ্রিল আবার এই বিমানবন্দরে ফ্লাইট শুরু হয়।

১৬০ দশমিক ৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত বিমানবন্দরটির রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফুট; প্রস্থ ১০০ ফুট।

বেসরকারি এয়ারলাইনস ইউএস-বাংলার জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এখনও আমরা বরিশালে দিনে একটি করে ফ্লাইট চালাচ্ছি, তবে যাত্রীর সংখ্যা আগের চেয়ে অনেক কম। এর একটি কারণ এখন পর্যটনের জন্য অফ সিজন। আর তার ওপর পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সড়কপথে ভ্রমণে মানুষের বাড়তি আগ্রহ আছে, তবে দীর্ঘ মেয়াদে আমি মনে করি না যে সড়কপথ ও আকাশপথ একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে।

‘এখন হয়তো পদ্মা সেতু দেখার বিষয়ে অনেকের বাড়তি আগ্রহ রয়েছে, আকাশপথের যাত্রী কিন্তু ভিন্ন। এ কারণে ৩-৪ ঘণ্টার দূরত্বের একটি পথ কখনও ২৫-৩০ মিনিটের যাত্রার সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে তিন দফা টোল দিতে হয়। তাতে অর্থের যে খুব বেশি সাশ্রয় হচ্ছে, তাও না। এখন হয়তো সাময়িক একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তবে এটা দীর্ঘ মেয়াদে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না।

‘আগামী পর্যটন মৌসুমে কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের প্রতি মানুষের একটি আগ্রহ তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে। এতে করে ঢাকার বাইরে থেকে যারা এখানে যেতে চাইবেন, তাদের একটি বড় অংশই আকাশপথ ব্যবহার করবেন বলে মনে হচ্ছে।’

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) মনে করছে, বিমানবন্দরকেন্দ্রিক অবকাঠামোর উন্নয়ন হলে বাড়বে যাত্রী।

বেবিচক চেয়ারম্যান এম মফিদুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে আমরা গর্বিত। এর একটা সুফল পাওয়া গেছে যে, অনেক যাত্রী এখন বাই রোডে যাওয়া-আসা করছে, কিন্তু এটা সাময়িক।

‘যখন সময়ের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে, তখন কিন্তু আবার এয়ারলাইনসগুলোর যাত্রীসংখ্যা বাড়বে। এখন হয়তো কৌতূহলের কারণে অনেকে সড়কপথ ব্যবহার করছে, কিন্তু যখন সেবার বিষয়টি আসবে, তখন আশা করি বিমানবন্দরগুলো সচল থাকবে এবং যাত্রী সংখ্যাও বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কোভিডের সময়েও দেখেছি, আমাদের যাত্রীরা আকাশপথেই বেশি আস্থা রাখছেন। হয়তো কোনো একটি বিমানবন্দরে কমলেও অন্য বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রী বাড়ছে। বিমানবন্দরকেন্দ্রিক রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগুলো যদি আরও তৈরি হয়, তাহলে আকাশপথে চলাচল আরও বাড়বে।

‘যেমন: নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে বিমানে ওঠার চেয়ে অনেকেই রাস্তার ঝক্কি কমাতে সেখান থেকেই বাসে করে চট্টগ্রাম চলে যান। শুধু বিমানবন্দর না, বিমানবন্দরকেন্দ্রিক যে ব্যবস্থাপনা, এগুলো যদি আরও ভালো করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে বিমান চলাচল আরও বাড়বে।’