বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে আপাতত আর কোনো তহবিল গঠন করা হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সভায় তিনি একথা জানান। বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে দেয়া অর্থ ‘সমন্বয়’ করে এর আকার ধীরে ধীরে কমানো হবে। ইতোমধ্যে ইডিএফের ১০০ কোটি ডলার সমন্বয় হয়েছে।
রপ্তানি খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন করেছিল এবং এর জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুত থেকে অর্থ নেয়া হয়েছিল। এখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে এই তহবিল থেকে বিতরণ করা অর্থ সমন্বয় করা হবে। অর্থাৎ তহবিলের অর্থ ফেরত আসার পর নতুন করে আর সেই অর্থ বিতরণ করা হবে না।
রপ্তানিমুখী শিল্পের বিকাশ ও প্রসারে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল থেকে ঋণ নিতে চুক্তি করেছে ৪৯টি ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্যাংকগুলো মাত্র দেড় শতাংশ সুদে এ ঋণ পাবে। গ্রাহক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে কাঁচামাল কেনা বা আমদানির বিপরীতে রপ্তানিকারকদের দেশি মুদ্রায় ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এই চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগের পরিচালক মাকসুদা বেগম এবং স্ব-স্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা সই করেন।
এ সময় গভর্নর বলেন, নতুনভাবে গঠিত ১০ হাজার কোটি টাকার প্রাক-অর্থায়ন তহবিলটিও দেশের রপ্তানি খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। রপ্তানি সহায়ক প্রাক-অর্থায়ন তহবিল থেকে অর্থায়ন কার্যক্রম শিগগির শুরু হবে। মাত্র ৪ শতাংশ সুদে এ তহবিল থেকে কাঁচামাল কেনা বা আমদানির বিপরীতে প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারকদের দেশি মুদ্রায় ঋণ নেয়ার সুযোগ থাকবে। এর মেয়াদ হবে ১৮০ দিন। এই ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংক পর্যায়ে সুদ হার হবে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, করোনা মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরূপ অবস্থা বিরাজ করছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর অভিঘাত সহনশীল করার পাশাপাশি এ খাতের বিকাশ ও প্রসারের চলমান ধারা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্পূর্ণ অর্থায়নে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি রপ্তানি সহায়ক ‘প্রাক-অর্থায়ন তহবিল’ গঠন করা হয়।
তিনি বলেন, সমাজের দরিদ্র ও অবহেলিত জনগোষ্ঠীর আর্থিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক নিরন্তর কাজ করে চলেছে। সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কৌশলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। কৃষক, নারী উদ্যোক্তা, কুটির শিল্পসহ ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ উদ্যোক্তা এবং রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীদের জন্য বেশ কয়েকটি প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
এছাড়া ব্যাংকগুলোকে নীতি সহায়তা প্রদান, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় অধিকতর মানুষকে জাতীয় উৎপাদনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের নতুন এই তহবিলের বৈশিষ্ট্য ও সুবিধাগুলো তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি নির্বাহী পরিচালক নূরুন নাহার তহবিল সম্পর্কে ধারণা সংবলিত একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন।
এ সময় সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আফজাল করিম, অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আর. এফ. হোসেন তাদের বক্তব্যে তহবিলটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের আশা প্রকাশ করেন।