শিরোনাম :

খুলনায় ডজনখানেক খুঁটি রেখেই চলছে সড়ক প্রশস্তকরণ

খুলনায় ডজনখানেক খুঁটি রেখেই চলছে সড়ক প্রশস্তকরণ
Admin

দুই দপ্তরের ঠেলাঠেলিতে হাই ভোল্টেজের একডজন বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ২৫ কোটি টাকার এই কাজের মধ্যে ১৯ ইঞ্চি কনক্রিটের ঢালাই দিয়ে নগরীর রূপসা ঘাট এলাকার সড়কে কাজ চলছে। এই কাজের মধ্যেই পড়েছে অধিকাংশ বৈদ্যুতিক খুঁটি।

সড়ক বিভাগ বলছে, আমরা ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) কাছে খুঁটি সরানোর জন্য অনেক আগেই আবেদন করেছি। কিন্তু তারা সরিয়ে দেয়নি।

অন্যদিকে, ওজোপাডিকো বলছে, সড়ক বিভাগের থেকে আমরা কেবল আবেদন পেয়েছি। কিন্তু তার মধ্যে তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। সরেজমিন না দেখে কোন খুঁটি সরাতে হবে তা বলা মুশকিল। এছাড়া সরকারি রাজস্ব দিয়েই এই খুঁটি সরাতে হবে।

খুলনা সড়ক বিভাগ এই রাস্তাটি প্রশস্তকরণের কাজ করছে। সরেজমিন দেখা যায়, সড়ক বিভাগের অধীন রূপসা ঘাটের কাছে ৬০ ফুট প্রশস্তের সড়ক ৮০ ফুট করা হচ্ছে। কিন্তু সড়কের মাঝে থাকা বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই চলছে কাজ। এতে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণের সুফল নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-যশোর-খুলনা মহাসড়কের খুলনা মহানগরীর ডাকবাংলো ফেরিঘাট থেকে রূপসা ঘাট পর্যন্ত অংশ খানজাহান আলী সড়ক নামেই পরিচিত। নগরীর অত্যন্ত ব্যস্ততম এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১০/১২ হাজার যানবাহন চলাচল করে। সড়কটির কোথাও কোথাও এতটাই সরু যে, প্রতিনিয়ত সেসব অংশে যানজট লেগেই থাকে। এছাড়া রূপসা ঘাট এলাকা নিচু হওয়ায় বর্ষার সময় জোয়ারে হাঁটু পানি জমে যায়।

এ অবস্থায় সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার (২ হাজার ৯৪০ মিটার) অংশ প্রশস্তকরণ ও মজবুত করতে কাজ শুরু করেছে সড়ক বিভাগ। এর মধ্যে রূপসা ঘাট এলাকার ৩৪৭ মিটার সড়ক হবে কংক্রিটের। বাকি অংশ হবে কার্পেটিং বা বিটুমিনের। প্রকল্পে মোট ব্যয় হবে ২৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সড়কটি একেকটি অংশে একেক রকম প্রশস্ত হবে।

সড়ক বিভাগ জানায়, সড়কের রূপসা ঘাট এলাকায় বর্তমান প্রস্থ ৬০ ফুট। দুইপাশে আরও ১০ ফুট করে নিয়ে সড়কের ওই অংশ ৮০ ফুটে উন্নীত করা হচ্ছে। এই অংশের ৩৪৭ মিটার অংশ প্রায় ১৯ ইঞ্চি কংক্রিট ও রডের মাধ্যমে ঢালাই দিয়ে উঁচুকরণের কাজ শুরু হয়েছে আরও আগে। এরইমধ্যে একপাশের ঢালাইয়ের কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে।

দেখা গেছে, সড়কের মাঝে বিদ্যুতের পুরাতন ছয়টি খুঁটি রেখেই দেওয়া হচ্ছে ঢালাই। আরও আটটি খুঁটি রেখেই সংস্কার করা হচ্ছে। প্রায় ১৯ ইঞ্চি পুরুত্বের ঢালাই ভেঙে ভবিষ্যতে এই খুঁটি স্থানান্তর করা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এতে প্রশস্ত করা বাকি অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। করলেও দুর্ঘটনার শিকার হবে। সড়কের অন্য অংশেও খুঁটি রেখেই প্রশস্ত করা হচ্ছে। কার্পেটিং করার পর এসব খুঁটিও অপসারণ করা কঠিন হয়ে পড়বে। মোট কতটি খুঁটি সরাতে হবে এখনো সেই তালিকা তৈরি করতে পারেনি সড়ক বিভাগ।

সার্বিক বিষয় নিয়ে সড়ক বিভাগ খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, নির্ধারিত সময়ে আমাদের প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। এজন্য এরইমধ্যে খুঁটি সরিয়ে নিতে ওজোপাডিকোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওজোপাডিকোর কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে কয়েকটি খুঁটি রেখেই কাজ করতে হচ্ছে। কয়েকটি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আরও ১০/১২ টি খুঁটি সরাতে হবে। কিন্তু অনেক জায়গায় খুঁটি সরানোর জায়গাও নেই। ফলে বাধ্য হয়ে খুঁটি রেখেই ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। পরে এগুলোর জন্য জায়গা দেখিয়ে দেওয়া হলে রাস্তা কেটে খুঁটি সরিয়ে দেওয়া হবে।

কাজের স্থানটি ওজোপাডিকোর বিক্রয় বিতরণ বিভাগ-১ এর আওতাধীন। ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী তারেক আহমেদ বলেন, আমাদের খুঁটির জায়গা দেখিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুঁটি সরিয়ে দিচ্ছি। যেই স্থানে খুঁটি রেখে কাজ হচ্ছে, সেখানে খুঁটি স্থানান্তরের জায়গা দেখিয়ে দেওয়া হয়নি।

ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা কেবল আবেদন পেয়েছি। এখন যাচাই করে দেখে খুঁটি সরাতে হবে। এজন্য সরকারি যে রাজস্ব আছে তা অবশ্যই সড়ক বিভাগ পরিশোধ করবে।

তিনি আরও বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবেই সব কাজ করতে হবে।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, খুঁটি রেখে কাজ অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই না। এই অর্থ ব্যয়ের সুফল নগরবাসী তো পাবেই না, উল্টো দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়বে।