সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বার সমিতি প্রাঙ্গণ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে রোববার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হাতাহাতি, ডিম নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
এদিন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে বারের অডিটোরিয়ামে বার্ষিক সাধারণ সভা ও ফলাফল ঘোষণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নির্ধারিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী বেলা ১টার দিকে আইনজীবী সমিতি অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা। বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা অডিটোরিয়ামের বাইরে অবস্থান নেন।
প্রথমে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে ভেতর থেকে গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। বারের বর্তমান সম্পাদক আব্দুন নূর দুলাল তার প্রতিবেদন উপস্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গে পাস পাস বলে আওয়াজ তোলেন আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা। এরপর সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচনের ফল ঘোষণা করে দ্রুত দায়িত্ব হস্তান্তর শেষ করেন। অডিটোরিয়ামের গেটের সামনে অবস্থান নেয়া বিএনপি আইনজীবীরা স্লোগান দেন। এ সময় কয়েকজন অডিটোরিয়ামের গেটের সামনে গেলে বাইরে থেকে ডিম ছুড়ে মারেন বাইরে অবস্থানরত বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা। এ সময় কয়েকজন আইনজীবীর মাথায় ডিম ভেঙে কালো কোট ও সাদা শার্ট মেখে যায়।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা দ্রুত সভা শেষ করে ডিম নিক্ষেপের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে সমিতি ভবনের উত্তর পাশ হয়ে বিএনপির আইনজীবীদের মুখোমুখি অবস্থান নেন। এ সময় দুইপক্ষের স্লোগান ও পাল্টা স্লোগানে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। তখন নতুন করে আবারও ডিম নিক্ষেপ শুরু হয়।
একদিকে বিএনপি সমর্থিত ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজলের নেতৃত্বে কয়েকশ আইনজীবী বিক্ষোভ করেন। অপরদিকে নবনির্বাচিত সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও সম্পাদক আব্দুন নূর দুলালসহ সরকার সমর্থক শতাধিক আইনজীবী পাল্টা স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত থেমে থেমে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগান, বিক্ষোভ চলে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, ‘আমরা যখন বিএনপির আইনজীবীদের উচ্ছৃঙ্খল ও তাণ্ডবের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করছিলাম তখন বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে থেকে আমাদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করা হয়। তখন আমিসহ অনেকের গায়ে ডিম ফেটে আমাদের জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়।’
বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী মাসুদ রানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনজীবীদের ভেতরে থাকা ছাত্রলীগ, যুবলীগ অতর্কিত হামলাসহ আমাদের ওপর ডিম নিক্ষেপ করেছে।’
দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের মধ্যেই নির্বাচনের আয়োজনের জন্য গঠিত এডহক কমিটি মতবিনিময় সভা করেছে। কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহসিন রশিদ বলেন, দুপুর ২টায় আইনজীবীদের সঙ্গে অডিটোরিয়ামে আমাদের মতবিনিময় করার কথা। কিন্তু তালা মারা থাকায় আমরা অডিটোরিয়ামের সামনেই মতবিনিময় করেছি।
তিনি বলেন, আমরা বেলা ১১টায় বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের নেতৃত্বে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করে একটি স্মারকলিপি দিয়েছি। সেখানে আমরা বলেছি, এই অনির্বাচিত সভাপতি ও সম্পাদকের সঙ্গে আপনি কোনো সম্পর্ক রাখবেন না।
এরপর এডহক কমিটি ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বক্তব্য তুলে ধরে ।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ মহসিন রশিদ বলেন, হঠাৎ করে সাধারণ সভা ও দায়িত্ব হস্তান্তরের এমন ঘটনা সুপ্রিম কোর্ট বার প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনোই ঘটেনি। সাধারণ সদস্যদের তলবি সভায় আজকের এই এডহক কমিটি। এই কমিটি ছাড়া বারে বর্তমানে আর কোনো কমিটি নেই।
প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকলিপি দেয়া প্রসঙ্গে বারে সমস্যা সমাধানে তিনি উদ্যোগ নিতে পারেন কি না এ প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ মহসিন রশিদ বলেন, প্রধান বিচারপতি এতে ইনভলভ হতে পারেন না। এটা আইনজীবীরাই সমাধান করবেন।
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ হট্টগোল, ভাঙচুর, হামলা-মামলার মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী আইনজীবী সমিতির নির্বাচন শেষ হয়। এই নির্বাচন থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয় বিএনপির আইনজীবীরা। ভোটে ১৪টি পদের সব কটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল জয়ী হয়। এ নির্বাচনকে কলঙ্কজনক উল্লেখ করে নতুন করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। গত মাসে বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলামের সভাপতিত্বে এক তলবি সভায় জানানো হয়, আগামী ১৪-১৫ জুন নতুন করে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।