খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনে তিন মেয়র পদপ্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং অফিসার।
তিন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত তালুকদার আবদুল খালেক স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের দিক থেকে এগিয়ে আছেন। তবে বার্ষিক আয় খালেকের থেকে প্রায় ৩ গুণ বেশি জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধুর। অন্যদিকে সম্পদ ও আয়ে পিছিয়ে থাকলেও শিক্ষাগত যোগ্যতায় বাকি দুই প্রার্থীর থেকে এগিয়ে আছেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল আউয়াল।
রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেয়া তাদের নির্বাচনী হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘হলাফনামার তথ্য যাছাই-বাছাই করে ৭ জনের মধ্যে তিন জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে, তারা ২১ মে-র মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করতে পারবেন। ২৫ মের মধ্যে যে কেউ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে পারবেন; ২৬ মে প্রতীক বরাদ্ধ দেয়া হবে এবং আগামী ১২ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।’
সম্পদ বেড়েছে তালুকদার আবদুল খালেকের
খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি করপোরেশন মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের বিপুল পরিমাণ পম্পদ রয়েছে। বর্তমানে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমান ৬ কোটি ৮৩ লাখ ১ হাজার ৫৮৫ টাকা। ২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৫ কোটি ৩ হাজার ২৬৬ টাকা। এই হিসেবে গত ৫ বছরে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে এক কোটি ৮২ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৯ টাকার।
২০২৩ সালের ১৬ মে ও ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল কেসিসি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
২০২৩ সালে আবদুল খালেকের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, নগদ ৪ কোটি ৭৯ লাখ ১ হাজার ১৭০ টাকা, ৪টি ব্যাংকে জমা ১ কোটি ১৮ হাজার ১৩৪ টাকা, ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, পোস্টাল এফডিআর ১৮ লাখ টাকা, লেক্সাস ব্রান্ডের ৪৪ লাখ টাকার গাড়ি, ১৪ লাখ ৮০ হাজার ২৮১ টাকার মাইক্রোবাস, এসি-টিভি-ফ্রিজ-ওভেন ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকার ও খাট-সোফা-টেবিল-চেয়ার-আলমারি ৭ লাখ ১২ হাজার টাকার।
বর্তমানে তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২৩ বিঘা কৃষিজমি। এ ছাড়া ক্রয় করা ৩ দশমিক ২১ একর কৃষিজমি ও ৩ কাঠা অকৃষি জমি, যার মোট মূল্য ২৮ লাখ ২১ হাজার টাকা। জমিসহ একটি বাড়ির অর্ধেক মালিকও খালেক, যার মূল্য ২ কোটি ১২ লাখ টাকা।
তবে ২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল, নগদ ৯ লাখ ৭৮ হাজার ৭৫০ টাকা, ৩টি ব্যাংকে জমা ছিল ২ কোটি ৪২ লাখ ৯৯ হাজার ৫১৬ টাকা, এসবিএসি ব্যাংকে শেয়ার ২ কোটি টাকা, ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ১০ লাখ টাকার এফডিআর, ১৮ লাখ টাকার পোস্টাল এফডিআর, ফ্যান-টিভি-ফ্রিজ ৭৫ হাজার টাকার ও খাট-আলমারি ৫০ হাজার টাকার।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ২৩ বিঘা কৃষিজমি। ক্রয় করা ৫ লাখ ৭১৯ টাকার ৯ কাঠা অকৃষি জমি ও শূন্য দশমিক ৪১৫ একর জমির উপর নির্মাণাধীন বাড়ি, যার মূল্য ৯০ লাখ ৮৮ হাজার ২৯৯ টাকা। ওই সময়ে তার মৎস ঘেরে বিনিয়োগ ছিল এক কোটি ৩৬ লাখ ৬২ হাজার ৯০০ টাকা।
হলফনামার তথ্যানুসারে, বর্তমানে তালুকদার আবদুল খালেকের বছরে কৃষিখাত থেকে আয় ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, ব্যাংকের সুদ থেকে আয় ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা, মেয়র পারিতোষিক ও ভাতা থেকে আয় ২৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
শিক্ষাগত যোগ্যতায় তালুকদার আবদুল খালেক বিএ পাস। তার বিরুদ্ধে আগে মামলা ছিল ৯টি। এর মধ্যে ৪টিতে অব্যাহতি ও ৫টিতে খালাস পেয়েছেন।
বার্ষিক আয় বেশি শফিকুল ইসলাম মধুর
তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সব থেকে বেশি বার্ষিক আয় করেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু। বছরে তার আয় ৯০ লাখ টাকা। যার মধ্যে বাড়িভাড়া থেকে আয় হয় ১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ও ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে ৮৮ লাখ টাকা।
তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ও ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা, মধুমতি ব্যাংক লিমিটেড খুলনা শাখায় ৩ কোটি টাকার এফডিআর, সাড়ে ২৩ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি, ১৪ ভরি স্বর্ণ, ১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, দেড় লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র ও স্ত্রীর নামে ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ৪ কাঠা জমি ও চারতলা বাড়ি, টুটপাড়া মৌজায় ০.১৩৭২ ও ০.১২৪৪ একরের দুটি জমি, যার সর্বমোট মূল্য ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
ব্যাংক ঋণেও তিনি শীর্ষে রয়েছেন। মধুমতি ব্যাংক খুলনা শাখায় তার ঋণের পরিমাণ ৫২ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
নিজেকে তিনি স্বশিক্ষিত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।
শিক্ষায় ওপরে আব্দুল আউয়াল
বৈধতা পাওয়া তিন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শিক্ষায় সবার থেকে এগিয়ে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের মো. আব্দুল আউয়াল। তবে সম্পদ ও অন্য সবকিছুতে পিছিয়ে রয়েছেন তিনি। নিজের পেশা হিসেবে তিনি লিখেছেন জামি’আ রশিদিয়া গোয়ালখালী মাদরাসার অধ্যক্ষ ও সাধারণ ব্যবসায়ী।
তার বার্ষিক আয় ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও মাদ্রাসার শিক্ষকতা থেকে ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ আছে নগদ ৬ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মূল্য ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা, আসবাবপত্রের মূল্য ৫০ হাজার টাকা, স্ত্রীর নামে ১৫ ভরি স্বর্ণ, যার মূল্য ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে শুধু নিজের নামে ৩ দশমিক ৫৭ শতক অকৃষি জমি। তবে তার নামে কোনো মামলা নেই।
তথ্যসূত্র ঃ নিউজবাংলা 24