‘খালেক মানেই বিজয়’- তিনি যে এলাকা থেকেই নির্বাচন করেন, সেখান থেকেই বিজয়ী হন। এমন একটি তকমা লেগেই আছে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের সঙ্গে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সব সরকারের আমলেই নির্বাচন করে সাফল্য পেয়েছেন। এ পর্যন্ত জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ১০ বার প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে পরাজিত হয়েছেন মাত্র একটিতে। তার নামের সঙ্গে কমিশনার, মেয়র, সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী সবই জড়িয়ে রয়েছে। সর্বশেষ জীবনের দশম নির্বাচনে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচিত হওয়ার পরে আবদুল খালেক বলেন, ‘দলমত নির্বাশেষে সকলে আমাকে ভোট দিয়েছেন। জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে হলেও আমি এই শহরের উন্নয়ন করবো।’
ভোটে বারবার বিজয়ী হওয়ার এই সাফল্যের কারণ হিসেবে তিনি মনে করেন, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা না করা, সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকা, অনৈতিক কাজকে প্রশ্রয় না দেয়া ও সর্বোপরি এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করা। এসব কারণে মানুষ তাকে ভালোবাসেন, বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন।
তালুকদার আবদুল খালেকের রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। জন্ম ১৯৫২ সালে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায়। তবে ছোট থেকেই তিনি পরিবারের সঙ্গে খুলনায় থাকতেন। ১৪ বছর বয়সেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নাম লেখান। ১৫ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে খুলনা মডেল স্কুল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ১৯৭৩ সালে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তালুকদার আবদুল খালেক। এরপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। জাতীয় শ্রমিক লীগের খুলনা আঞ্চলিক সভাপতি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাযনির্বাহী সদস্য ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন তিনি। বর্তমানে তৃতীয় মেয়াদে মহানগরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৭৭ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন তালুকদার আবদুল খালেক। নির্বাচন করেছিলেন খুলনা পৌরসভার মহাসিনাবাদ ইউনিয়নের কমিশনার পদে। ১৯৮৮ সাল পযন্ত পরপর দুইবার ওই ইউনিয়নের কমিশনার ছিলেন তিনি।
এরপর ১৯৯১ সালে রামপাল-মোংলা থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেন। ২০০৮ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার ওই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। এর মধ্যে ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
দল তাকে ওই আসন থেকে পদত্যাগ করিয়ে ২০০৮ সালে খুলনা মহানগরের মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য দাঁড় করিয়ে দেয়। সেখানেও সাফল্য পান তিনি। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের কাছে হেরে যান। এটাই একমাত্র তার জীবনে নির্বাচনের পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ।
২০১৪ সালে দল তাকে আবারও রামপাল-মোংলা আসনে মনোনয়ন দেয়। ২০১৮ সাল পযন্ত ওই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে আবারও তাকে ওই আসন থেকে পদত্যাগ করিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থী করে আওয়ামী লীগ। চলতি বছরের কেসিসি নির্বাচনে দল থেকে তাকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এবং তিনি নির্বাচিত হয়েছেন।
তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘আমি সবসময় চেষ্টা করেছি মানুষের জন্য কিছু করার। মানুষই বিবেচনা করবেন আমি কেমন। দল যখন যেভাবে চেয়েছে আমি সেভাবে দলকে উজাড় করে দিয়েছি। এ কারণেই হয়ত বিভিন্ন জায়গায় আমাকে প্রার্থী করা হয়েছে।’
২০১৩ সালে মেয়র পদে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘ওই সময়ও আমার পরাজিত হওয়ার কথা নয়, এমন কোনো কাজ করিনি যাতে আমি হেরে যাব। ওই হারটা ছিল অপ্রত্যাশিত। দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। দলীয় লোকজনই নৌকার ব্যাচ বুকে নিয়ে ধানের শীষে ভোট দিয়েছেন। এ কারণেই ওই সময় পরাজিত হয়েছি।’
তালুকদার আবদুল খালেককে কেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন জায়গার প্রার্থী করা হচ্ছে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘তালুকদার আবদুল খালেক একেবারে তৃণমূল থেকে গড়ে ওঠা এক নেতা। একজন কর্মীবান্ধব নেতা এবং দলের একজন নিবেদিত ও পরীক্ষিত লোক। দুসময়ে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি গড়ে উঠেছেন। তার রাজনীতিতে কোনো বিচ্যুতি নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সাচ্চা কর্মী ও শেখ হাসিনার একজন সাচ্চা সহযোদ্ধা।’
তিনি বলেন, প্রতিটি এলাকাতেই তালুকদার আবদুল খালেক ব্যাপক জনপ্রিয়। এ কারণেই দল তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রার্থী করছে।