ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বরধারীদের (টিআইএন) বাধ্যতামূলক ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দিতে হচ্ছে না। ১ জুন প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে টিআইএনধারীদের ওপর এই করারোপের প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার।
টিআইএনধারীদের ন্যূনতম কর প্রস্তাব প্রত্যাহারসহ কয়েকটি সংশোধনী এনে রোববার জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে অর্থবিল ২০২৩। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলটির সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি করা হয়।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলপয়েন্ট কলমের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। বলপয়েন্ট কলমের ওপর বিদ্যমান ৫ শতাংশের সঙ্গে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ যুক্ত করে বাজেটে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে, বিলটি পাসের সময় নতুন প্রস্তাবিত ওই ১০ শতাংশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ফলে বলপয়েন্ট কলমে ভ্যাট আগের ৫ শতাংশই থাকছে।
বাজেটের ওপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রীর সমাপনী বক্তব্যের পর অর্থবিল-২০২৩ সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করা হয়। এর আগে বিলটির ওপর সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ফখরুল ইমাম, মুজিবুল হক, রূস্তম আলী ফরাজী, রওশন আরা মান্নান, কাজী ফিরোজ রশীদ, রেজাউল করিম, শহীদুজ্জামান সরকার বক্তব্য দেন।
তারা ব্যাংক খাতের অরাজকতা, কালো টাকা সাদা করা, অর্থ পাচার, আর্থিক খাতের নৈরাজ্য নিয়ে বক্তব্য দেন। অর্থবিল-২০২৩ এর ওপর এই সদস্যদের আনা জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বাজেটের সমাপনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আশপাশের অনেক দেশের তুলনায় আমরা ভালো আছি। আমাদের অর্থনীতি ভালো আছে। যারা আমাদের বৈদেশিক ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের জন্য বলি- আমাদের বর্তমান বৈদেশিক ঋণ জিডিপির মাত্র ৩৪ শতাংশ। এটা অন্য দেশের ২৬১ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। ফলে বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে আমাদের কোনও ঝুঁকি নেই। আমরা ভালো অবস্থানে আছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন অর্থনীতির কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আমাদের দেশকে মাত্র ১৪ বছরে ৬০তম অবস্থান থেকে ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।
‘এখন আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা।’
এদিকে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সংসদে বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী যখনই বলেন যে জিনিসপত্রের দাম কমাবেন, পরদিনই দাম বেড়ে যায়।’
বাণিজ্যমন্ত্রী সিন্ডিকেটে জড়িত কিনা এমন প্রশ্ন তুলে চুন্নু বলেন, ‘বাজারে নিয়ন্ত্রণ নেই। একটু নিয়ন্ত্রণ দেন।’
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘সরকার বিশাল ঘাটতির বাজেট করেছে। এ বিশাল ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকারকে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নিতে হবে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে দেবে, ওই টাকা ব্যাংক থেকে সরকারকে দেবে।’
টাকা ছাপানো হলে দুটি জিনিস হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সরকার টাকা নিলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ঋণ পাবে না। কর্মসংস্থান হবে না। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।’
ব্যাংক লুট হয়েছে উল্লেখ করে শামীম হায়দার বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় খেলাপি ঋণ ১১ শতাংশ, বাংলাদেশে তা ৯ শতাংশ। এটা সরকারের হিসাব। আইএমএফের হিসাব ধরলে আমাদের খেলাপি ঋণ ৩ লাখ কোটি টাকা। অর্থাৎ বর্তমান বাজারের অর্ধেক। সরকারি হিসাবে অবলোপনসহ খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।’
ব্যাংক থেকে বিপুল ঋণ নেয়ার জন্যই জনগণের ওপর অন্যায় করের বোঝা চাপানো হয়েছে বলে দাবি করেন জাতীয় পার্টির এই সদস্য। তিনি বলেন, ‘তৃতীয় বিশ্বের উদীয়মান দেশের কর, আর উন্নত বিশ্বের কর একই হতে পারে না। দেশে দুর্নীতির অশুভ প্রতিযোগিতা চলছে। এ সরকার ওয়াদা করেছিল যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাবে। অথচ দুর্নীতি এখন নীতিতে পরিণত হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এখন শূন্য। জিরো টলারেন্স হয়নি।’-সংবাদসূত্রঃ নিউজবাংলা24