ফটিকছড়ির সুয়াবিলে একসঙ্গে দুই বোনের বিসিএসে সাফল্য ।
তালহা চৌধুরী রুদ্র (ব্যুরো চীফ চট্টগ্রাম বিভাগ)।
সৈয়দা ফাতিমা সিদ্দিকা ও তাঁর ছোট বোন জান্নাতুন নাঈম সিদ্দিকা এবার ৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
ছয় বোনের মধ্যে বড় সৈয়দা ফাতিমা সিদ্দিকা। তাঁর এক বছরের ছোট জান্নাতুন নাঈম সিদ্দিকা। এবার ৪১তম বিসিএসে এ দুজনেই শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। স্কুলশিক্ষক মৃত মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন সিদ্দিক ও গৃহিণী সৈয়াদা কুলসুমা আকতারের মেয়ে তাঁরা। বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড পূর্ব সুয়াবিল গ্রামে।সৈয়দা ফাতিমা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ভাই নেই। এ কারণে সমাজের অনেকেই নানান কথা বলেছে। মেয়েদের এত পড়াশোনা করিয়ে কী হবে? তবে মা-বাবা সব সময় সাহস দিয়েছেন। তাঁদের অনুপ্রেরণাতেই তাঁরা শিক্ষা ক্যাডারের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
মেয়েদের এ সাফল্য অবশ্য দেখার সৌভাগ্য হয়নি বাবা আলতাফ হোসেনের। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি মারা যান। ছোট চার বোনের মধ্যে দুই বোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং এক বোন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আরেক বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন।ফাতিমা ও জান্নাতুন রাউজানের চিকদাইর উচ্চবিদ্যাল থেকে মাধ্যমিক ও চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ফাতিমা ২০১৫ সালে সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর ও জান্নাতুন ২০১৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।২০১৮ সালে একসঙ্গে প্রাথমিক বিদ্যালে সহকারী শিক্ষক পদে ফাতিমা ও জান্নাতুন চাকরি পেয়েছিলেন। এর মধ্যে জান্নাতুন ২০২০ সালে প্রাথমিকের শিক্ষকতা ছেড়ে সরকারি ব্যাংকে যোগ দেন। যার শাখা ছিল রাজশাহীতে।
ফাতিমা জানান, চাকরির পর পড়াশোনা থেকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। চাকরি ও সংসারের টুকিটাকি কাজ এসব করে আবার বিসিএসের জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বেশ কষ্ট হয়েছে। তবে করোনার বন্ধের সময়টা তাঁর জন্য ছিল ফাতিমা বলেন, করোনার বন্ধে তিনি ঘুম-খাওয়া বাদে পুরোটা সময় পড়াশোনায় ব্যয় করেছেন। দিনে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পড়াশোনা করতেন। এ কারণে অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানেও তিনি অংশ নিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হয়েছেন। তবে এখানেই তিনি থেমে থাকবেন না। প্রশাসন ক্যাডারে যাওয়ার জন্য তিনি চেষ্টা করবেন।
জান্নাতুন নাঈম অবশ্য এর আগে ৪০তম বিসিএসেও শিক্ষা ক্যাডারের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি ওই ক্যাডারে প্রশিক্ষণের জন্য ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি জানান, ব্যাংকে চাকরি হওয়ার আগে দুই বোন মিলে প্রস্তুতি নিতেন। তবে ব্যাংকে চাকরির কারণে তাঁকে প্রায় দুই বছর পরিবার থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। এ সময়টাতে তিনি একাই প্রস্তুতি নিতেন। তবে মুঠে ফোনে বোনের সঙ্গে প্রস্তুতি নিয়ে কথাবার্তা বলতেন।জান্নাতুন প্রথম আলোকে বলেন, চাকরির পাশাপাশি যতটুকু সময় পেয়েছেন তিনি পড়েছেন। শুক্র ও শনিবার সারা দিন লাইব্রেরিতে কাটিয়েছেন। তাঁর বাবার পেশা ছিল শিক্ষকতা। তাই শিক্ষকতাই বেঁচে নিয়েছেন। এ পেশাতেই স্থায়ী থাকবেন। তাদের দুই বোনের সাফল্যের কারণ তাদের পরিবার। মূল কথা পরিবারই ছিল তাদের অনুপ্রেরণা।