শিরোনাম :

সড়ক বিভাজক বাঁচানোর নামে নির্বিচারে গাছ নিধন

সড়ক বিভাজক বাঁচানোর নামে নির্বিচারে গাছ নিধন
Admin

মহানগরীর সড়ক বিভাজক জুড়ে গাছ আর গাছ। আর তা নগরকে করেছে যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনই প্রকৃতি নির্মল করতেও রাখছে ভূমিকা। মিলছে তপ্ত সড়ক ধরে ছুটতে গিয়ে যানজটে আটকে পড়া বাহনের চাল ও যাত্রীদের আপাত শীতলতা।

শিল্প নগরী খুলনার মুজগুন্নী এলাকার এমন চিত্র অতীত হতে চলেছে। কেটে ফেলা হচ্ছে সড়ক বিভাজকের সব গাছ। ইতোমধ্যে ২৫টির বেশি অস্তিত্ব হারিয়েছে। অন্যগুলোও কেটে ফেলার তোড়জোড় চলছে।

এই নিধন যজ্ঞ চালাচ্ছে খোদ খুলনা সিটি করপোরেশন। নগর কর্তৃপক্ষের যুক্তি, ব্যক্তি-উদ্যোগে লাগানো গাছগুলো বড় হয়ে গেছে। এতে করে এগুলোর শেকড়ের চাপে ভেঙে যাচ্ছে সড়ক বিভাজক। তাই সব গাছ কেটে ফেলে সৌন্দর্য্য বর্ধনে নতুন করে গাছ লাগানো হবে।

বুধবার সকাল থেকে ১২-১৩ জন শ্রমিক মুজগুন্নী এলাকার সড়কে গাছ কাটা শুরু করেন। তারা বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের নয়, আমরা ছয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নিয়োগ করা লোক। তার নির্দেশেই গাছ কাটছি।’

গাছ কাটায় নিয়োজিত ইসমাইল হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘শুনেছি এই বড় সব গাছ কেটে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য ঝাউগাছ লাগানো হবে।’

ইতোমধ্যে তারা কতগুলো গাছ কেটে ফেলেছেন সেই হিসাব তিনি দিতে পারেননি। শুধু বলেছেন, ‘নতুন রাস্তা মোড় থেকে কালভার্ট পর্যন্ত অংশের গাছগুলো সব কেটেছি। পরবর্তীতে এই সড়কের অন্যান্যা অংশের গাছগুলোও কাটা হবে।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিএল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘সকালে এই পথে আমরা মর্নিং ওয়াক করি। গাছগুলো দেখে ভালো লাগে। কেন গাছগুলো কেটে ফেলা হলো ঠিক বুঝতে পারছি না। পরিবেশের যে প্রতিকূলতা, তাতে খুব বেশি অসুবিধা না হলে গাছ না কাটাই উচিত। বরং আমাদের আরও বেশি বেশি করে গাছ লাগাতে হবে।’

‘সকালে গাছগুলো কাটতে দেখে খারাপ লাগলো। শ্রমিকদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে জানলাম যে খোদ সিটি করপোরেশনই গাছগুলো কাটছে। এই গাছগুলো চোখের সামনে পাঁচ/ছয় বছর ধরে দেখছি। এখন একদম ফাঁকা, মনের ভেতর খা খা করছে;’ যোগ করেন তিনি।

সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে খুলনা সোনাডাঙ্গা-মুজগুন্নি সড়কের নতুন রাস্তার মোড় থেকে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত ৪০০ মিটার অংশের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ঠিক কতগুলো গাছ ছিল তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে মাঝারি ও বড় গাছের কাঁটা অংশ পাওয়া গেছে ২৫টির বেশি।

শ্রমিকরা গাছগুলো গোড়া থেকে কেটে সড়কের পাশে নিয়ে ডালপালা ছেটে আলাদা করে ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছেন। শ্রমিকদের কেউ কেউ কোদাল দিয়ে কাঁটা অংশের গোড়াগুলো মাটি দিয়ে সমান করছেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনার সমন্বয়কারী বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘এটি আহাম্মকী কাজ। লাগানো গাছ কেটে নতুন করে গাছ লাগানো এক ধরনের প্রহসন। অর্থ লোপাটের ব্যবস্থা করা আর কি।

‘এই গাছ যদি কেউ ব্যক্তি-উদ্যোগে লাগিয়ে থাকেন তাতে অসুবিধা কোথায়? এই মহাসড়কের ডিভাইডারে লাগানো ছোট ছোট বাদাম গাছগুলো ছায়া দিত। দেখতেও সুন্দর লাগতো। কেটে ফেলা গাছগুলোর মধ্যে একটি বট গাছের ছবি এখনও চোখে ভাসছে আমার।’

‘উন্নয়ন সবসময় পরিবেশ-বান্ধব হওয়া উচিত। রাস্তার দোহাই দিয়ে, ডিভাইডার ভালো রাখার অজুহাত দিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের এই গাছগুলো কাটা ঠিক হচ্ছে না। এই কাজ এখনই বন্ধ করা উচিত’, বলেন তিনি।

খুলনা সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স বলেন, ‘বড় গাছ যেমন রেইন ট্রিসহ অন্যান্য গাছ কাটা হচ্ছে। কারণ এসব গাছ বড় হয়ে ডিভাইডার ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু ছোট গাছ এবং খুবই প্রয়োজনীয় যেমন নিমসহ অন্যান্য গাছ রেখে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ছোট গাছ লাগানো হবে।’

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘ডিভাইডার-এর উপরে লাগানো বড় গাছগুলো কেটে ফেলা হচ্ছে কারণ এগুলোর জন্য ডিভাইডার ফেটে যাচ্ছে। তাছাড়া এই গাছগুলো লাগানো হয়েছে ব্যক্তি-উদ্যোগে। কেন তারা সড়ক ডিভাইডারে গাছ লাগাবে?

‘ইচ্ছেমতো তো এখানে গাছ লাগানো যাবে না। এই ডিভাইডার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। তারা তাদের মতো করে গাছ লাগাবে।’

-ছবি ও তথ্যসূত্রঃ নিউজবাংলা24