শিরোনাম :

প্রথম বছরেই চাষে ব্যাপক জনপ্রিয়তা বঙ্গবন্ধু ব্রি ধানের

প্রথম বছরেই চাষে ব্যাপক জনপ্রিয়তা বঙ্গবন্ধু ব্রি ধানের
Admin

চলতি বোরো মৌসুমে মাঠে প্রথমবারের মতো সীমিত পরিসরে চাষ হয় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান ১০০, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু ধান’। ধানের আকার ছোট যা নাইজারশাইল, জিরাশাইল, দাতখানি বা কাটারির মতো। হালকা লালচে রংয়ের এ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। একর প্রতি ৫৫-৬০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া গেছে যা প্রচলিত জাত ব্রি ধান ২৮ এর চেয়ে বেশি। ধানের দানা পুষ্ট এবং আকার কিছুটা গোলাকার। ইতোমধ্যে ধান কাটা ও মাড়াই শেষে তা অনেকে আগ্রহভরে চাল বানিয়ে ভাত রান্না করে খেয়ে বলেছেন এ ধানের চাল বাজার মাতাবে। ঝরঝরে ভাত ঠিক কাটারিভোগের চালের মতো ছোট ও চিকন। এ চালে কেবল ঘ্রাণ নেই। তাছাড়া সকল বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। বিশেষ করে জিঙ্কের উপস্থিতি প্রচলিত সব জাতের ধানের চেয়ে বেশি। অ্যাইমাইলোজের পরিমাণও বেশি। ভাত সুস্বাদু। আতপ ও সিদ্ধ উভয় চালই আকর্ষণীয় আকারের। তবে যেহেতু চাষ হয়েছে সীমিত জমিতে তাই এ চাল এবছরই বাজারে আসছে না। বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসতে আরও ৩-৪ বছর সময় লাগবে। তবে যারা সৌখিন চাষি বা ক্রেতা তারা চুক্তিভিত্তিতে এ ধান চাষ করে চাল বানিয়ে বাজারে আসার আগেভাগেই স্বাদ নিতে পারেন বা পারিবারিকভাবে খেতে পারেন। এ চালের সবচেয়ে বড় উপকার জিঙ্কের বেশি উপস্থিতি। শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি, রোগ-প্রতিরোধ ও খিদে বাড়াতে এ চাল উপকারী।
খুলনার ডুমুরিয়ায় নিজ পৈত্রিক জমির এক বিঘা জায়গায় এ ধান চাষ করান সৌখিন ধানচাষি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক এস এম আতিয়ার রহমান। নানা বিষয়ে অগ্রসর ভাবনার এ কর্মকর্তা একই জমিতে ২০১০ সালে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত ব্রি ধান ৫০ ‘বাংলামতি’ চাষ করে সারাদেশে সাড়া ফেলেন। গত বছর আমন মৌসুমে পদ্মার এপার প্রথম ব্রি ধান ৯০ এবং লুপ্তপ্রায় বিন্নিধান চাষ করেন। এবার ব্রি ধান ১০০ বঙ্গবন্ধু ধান চাষ সর্ম্পকে তিনি বলেন, নতুন উদ্ভাবিত এ ধান সম্পর্কে জেনে তিনি ব্রি’র সদর দপ্তর গাজীপুরে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে বীজের ব্যাপারে ব্রি’র গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিলে তিনি সেখানকার প্রধান ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলামের সাথে কথা বলে ৫ কেজি বীজ সংগ্রহ করেন। ওই বীজ দিয়েই ডুমুরিয়ার কার্তিকডাঙ্গা বিলে এক বিঘা জমিতে এ ধানের চারা লাগানোর ব্যবস্থা নেন। এবার ঈদুল ফিতরের প্রায় ৮-১০ দিন আগেই অর্থাৎ এপ্রিল মাসের শেষে ধান কাটা হয়। কাটা ও মাড়াই শেষে ধান ভাঙ্গিয়ে যে চাল পান তাতে তিনি অবাক। শতকরা ৯৫ শতাংশের বেশি চাল অভাঙ্গা রয়েছে যা সাধারণত ধান কেটে শুকিয়ে এতো তাড়াতাড়ি এ রকম ভালো চাল পাওয়া যায় না। তিনি এ চালের ভাতের ব্যাপারে জানান নিঃসন্দেহে ব্রি’র এটা ভালো জাত হিসেবে কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় পাবে এবং বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসা শুরু হলে এটা ক্রেতার আগ্রহ অর্জন করবে। যারা আতপ ও সিদ্ধতে একটু চিকন ও ছোট আকারের চাল পছন্দ করেন তাদের জন্য এটা খুবই পছন্দের হবে। তিনি আরও জানান, ভালো মানের হোটেলগুলোতেও এ চালের ভাত ভোক্তাদের আগ্রহ বাড়াবে।
জানা যায়, এ বছর ব্রি ধান ১০০ তথা বঙ্গবন্ধু ধানের সবচেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে গোপালগঞ্জে এবং এর মধ্যে কোটালিপাড়ায়।
ব্রি’র গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রের প্রধান ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানান, এবার তিনি এক হাজার কেজি বীজ কৃষকদের মাঝে দেন। তার মধ্যে অল্পকিছু নড়াইল ও বাগেরহাট এলাকাতেও গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায়। তাঁর প্রদত্ত বীজে ৫শ একরেরও বেশি জায়গায় এ ধান চাষ হয়েছে যা সারা দেশে চাষকৃত জমির এক তৃতীয়াংশের বেশি। গোপালগঞ্জের চাষিরা সাধারণত মোটা ধান চাষ ও মোটা চাল খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ধানের চাষ করে তারা খুশি। কারণ, এ ধানের উৎপাদনও ভালো এবং রোগবালাই কম হয়েছে। বাজারে দু’চারজন ধান বিক্রি করলেও তার দাম পেয়েছেন প্রচলিত ২৮ জাতের চেয়ে বেশি। ফলে এ ধান আগামী মৌসুমে ব্যাপক চাষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে ব্রি ধান ২৮ বা অন্য অনেক ধানের অবাদের স্থান দখল করে নেবে বঙ্গবন্ধু ধান এমনটিই আশা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, এ ধানের জীবনকাল ১৪৮ দিন। এ ধানের উচ্চতা ১০১ সে.মি.। প্রতিকেজি চালে জিঙ্কের পরিমাণ ২৫.৭ মিলিগ্রাম। অ্যামাইলোজ ২৬.৮% ও প্রোটিন ৭.৮%।