ভারতে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গীদের মধ্যে নেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
সরকারি এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা ইউএনবির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা ইউএনবিকে বলেন, ‘তিনি (মোমেন) অসুস্থ বোধ করছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাননি।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে টিকিয়ে রাখতে ভারত সরকারকে অনুরোধ করা নিয়ে গত ১৮ আগস্ট পররাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।
চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। শেখ হাসিনা আমাদের আদর্শ। তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ হবে।
‘শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি।’
ওই বক্তব্যের পর তোপের মুখে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তার বক্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের দুই দিন পর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ১৫ আগস্ট স্মরণে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমানকে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগের কেউ নন।’
এদিকে জানা যায়, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটিতে রয়েছেন ড. এ কে আবদুল মোমেন।
চট্টগ্রামে দেয়া বক্তব্যের জেরে নানা আলোচনা-সমালোচনার দুই সপ্তাহ পর প্রধানমন্ত্রীর সফরে অনুপস্থিত দেখা গেল পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে।
তিন বছর পর চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির উদ্দেশে রওনা হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকাল ১০টায় সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশের একটি বিশেষ ফ্লাইটে রওনা হন তিনি।
ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে এসে অবতরণের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী ফ্লাইটটির।
বিমানবন্দরে শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানাবেন ভারতের রেল ও টেক্সটাইল প্রতিমন্ত্রী দর্শনা বিক্রম জারদোশ এবং নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান। আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী উঠবেন হোটেল আইটিসি মাওরায়।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, রেলপথমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা এবং বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীসহ মোট ১৭১ জন।
প্রধানমন্ত্রীর এ সফর ঘিরে ঢাকার মতো বিপুল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে দিল্লিতেও। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরবর্তী বিশ্ব পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক স্বার্থ ও বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেখ হাসিনার এ সফরকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
সফরে ব্যবসায়ীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্র তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু কূটনৈতিক পর্যায়ে সাফল্যের বিষয়টি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি। কারণ বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে বড় আগ্রহের বিষয় তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে বড় কোনো অগ্রগতির সংবাদ এখনও জানা যায়নি।
দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সরবরাহ ও সহযোগিতার জন্য দিল্লিকে প্রস্তাব দেবে ঢাকা। এ বিষয়ে ভারতের সম্মতি পাওয়া গেলে এই ইস্যুতে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারত বুঝতে চাইবে বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বাস্তব রূপ।
প্রধানমন্ত্রীর এবারের সফরে কুশিয়ারা নদীর পানি ব্যবহারসহ ছয়টি নদীর পানিবণ্টন-বিষয়ক সহযোগিতা নিয়ে সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা রয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব (সিইপিএ) বা সেপা চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য যৌথ ঘোষণা দেয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর।
এই চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের আকার ৪০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে চায় ভারত।
ভারত বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে যৌথ প্রতিরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে একটি কাঠামো নির্মাণ (সামরিক সরঞ্জাম কারখানা স্থাপন) চুক্তির জন্য জোর দিচ্ছে। অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরির বিষয়ে এই চুক্তিকে ভারত অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানিয়েছে দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র।