খুলনা বিএমএ’র বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা
বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশন-বিএমএ খুলনা শাখা আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, রাষ্ট্রীয় অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই চিকিৎসকদের সাথে রোগীর স্বজনদের মুখোমুখি করে ফেলা হচ্ছে। এর ফলেই বার বার চিকিৎসকরা কর্মস্থলে হামলার শিকার হচ্ছেন। রোগীর স্বজনদের সংক্ষুব্ধতার কারণও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী জনবলসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকা। এ অবস্থার অবসানে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি যথাযথ অবকাঠামো নির্মাণ, চাহিদা অনুযায়ী জনবল নিয়োগ, চিকিৎসা যন্ত্রপাতি দেয়াসহ সকল চাহিদা মেটাতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, দেশের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের এসব নাজুক অবস্থার দিকে নজর না থাকলেও ডিসি সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমলাদের ওপর চিকিৎসকদের তদারকির দায়িত্ব দেয়ার কথা বলেছেন। চিকিৎসা জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও আমলারা কিভাবে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান তদারকি করবেন সেটিও প্রশ্নের বিষয় বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রোগীর স্বজনদের হাতে একজন নারী চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী শাররীকভাবে লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হওয়ার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার দুপুরে এ বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
নগরীর সাতরাস্তা মোড় সংলগ্ন শহীদ ডা: মিলন চত্বরে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, খুলনা বিএমএ’র সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা: শেখ বাহারুল আলম।
খুলনা বিএমএ’র প্রচার ও জন-সংযোগ সম্পাদক ডা. সাইফুল্লাহ্ মানছুর এর সঞ্চালনায় এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, বিএমএ খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মোঃ মেহেদী নেওয়াজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. নিয়াজ মুস্তাফি চৌধুরী, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিজিটিডিএ এর সাধারণ সম্পাদক ডা. হিমাদ্রী শেখর, শিশু বিভাগের প্রধান ডা. রোকসানা পারভিন, খুলনা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্নী চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. সাইফুল ইসলাম অন্দর, সহ-সভাপতি ডা. তৌফিক বাশার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহমুদ হাসান, যুগ্ম সম্পাদক ডা. তিথি মল্লিক, ডা. ইনামুল হাসান সিদ্দিকী, ডা. নয়ন পাল, আকিজ আদ দ্বীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্নী চিকিৎসকদের সভাপতি শেখ ডা. মাহ্মুদুল হাসান।
বিক্ষোভ সমাবেশে গত ১১ ফেব্রুয়ারি খুমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে হামলার ঘটনার নিন্দা জানানোর পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসারও জোর দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, ৫শ’ শয্যার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন প্রায় ১৫শ’ রোগী ভর্তি থাকে। অন্যদিকে ৫শ’ বেডের অনুপাতে হাসপাতালে জনবল প্রায় ৩০ ভাগ কম। এমতাবস্থায় এত কম সংখ্যক চিকিৎসক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী এবং অপ্রতুল চিকিৎসা উপকরন দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ায় একটি জটিল পরিস্থিতি ধারন করেছে। যা চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে দুরত্ব ও ভূলবোঝাবুঝির সৃষ্টি করছে।
বক্তারা আরও বলেন, রাষ্ট্রের অনেক কম ঝুকিপূর্ণ জায়গা বা প্রতিষ্ঠানে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও অনুমোদিত শয্যার কয়েকগুন বেশি রোগী নিয়ে চলমান স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যার ফলে জনসাধারণ হর হামেসাই স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাংচুর চালাচ্ছে এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীর স্বজনদের হাতে নিগৃহিত হয়েই চলেছে। এ ঘটনার অবসান হওয়া জরুরি বলেও বক্তারা উল্লেখ করেন।
এই ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এবং চিকিৎসকদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহন না করা হলে পরবর্তীতে কঠিন কর্মসূচির মাধ্যমে দাবি আদায় করা হবে বলেও বক্তারা হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।