প্রাথমিকে বৃত্তির সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সফটওয়্যারের টেকনিক্যাল কোডিংয়ে ভুলের উল্লেখ করে মঙ্গলবার এই ফল প্রকাশ করার পর তা স্থগিত করা হয়েছিল। নতুন করে প্রকাশিত ফলাফলে আগের দিনে বৃত্তি পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীর ফলে পরিবর্তন এসেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক ও শিক্ষক।
বুধবার রাত ১০টা ৪০ মিনিটে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়।
সংশোধিত ফলাফলে এবার প্রাথমিকে বৃত্তি পেয়েছে ৮২ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ট্যালেন্টপুলে ৩৩ হাজার এবং সাধারণ গ্রেডে ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন বৃত্তি পেয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষার স্থগিতকৃত ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে প্রকাশিত ফলাফলে যে অসঙ্গতি ছিলো নতুন করে প্রকাশ করা ফলাফলে সেটা সংশোধন করা হয়েছে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে অনিচ্ছাকৃত ত্রুটির জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসে ৩০০ টাকা করে এবং সাধারণ কোটায় বৃত্তিপ্রাপ্তরা মাসে ২২৫ টাকা করে পাবে। এছাড়া বৃত্তিপ্রাপ্ত সব শিক্ষার্থীকে প্রতি বছর এককালীন হিসেবে ২৫০ টাকা করে দেয়া হবে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এই বৃত্তি পাবে।
এবারের প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০২২ সালে ৩০ ডিসেম্বর। বাংলা, প্রাথমিক গণিত, ইংরেজি ও প্রাথমিক বিজ্ঞান- এই চার বিষয়ে পরীক্ষা হয়। সারাদেশে ৪ লাখ ৮৩ হাজার ৭৫৯ জন শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়।
এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে প্রাথমিকে বৃত্তির ফল ঘোষণা করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। ঘোষণার চার ঘণ্টার মধ্যেই কারিগরি ত্রুটির কারণ দেখিয়ে ফল স্থগিত করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। পরে ওয়েবসাইট থেকেও ফল সরিয়ে নেয়া হয়।
কারিগরি ত্রুটি সংশোধন করে একদিন পর সংশোধিত ফল প্রকাশ করল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে প্রথম দিনে বৃত্তি পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীর ফলাফলে পরিবর্তন এসেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক।
ফল স্থগিতের বিষয়ে ফল তৈরির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের পর জেলা শিক্ষা অফিসে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে কোড দেয়া হয়। এরপর শিক্ষকরা সেই খাতা মূল্যায়ন করেন। ফলে কার খাতা কোনটি তা বোঝা যায় না। কিন্তু মূল্যায়নের পর প্রাপ্ত নম্বর কোড অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বরে যোগ হয়। শেষের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডি-কোডিং। এই কোডিং এবং ডি-কোডিং প্রক্রিয়ায় ভুল হয়েছে। ঝিনাইদহের শৈলকুপাসহ কয়েকটি উপজেলায় সব শিক্ষার্থীকে একই কোড নম্বর দেয়া হয়েছে বলে ডিপিইর কম্পিউটার সেলে ধরা পড়ে। এ কারণে সারা দেশের ফল পুনরায় যাচাই করার জন্য ফল স্থগিত করা হয়।
এদিকে স্থগিত হওয়া বৃত্তির ফল বুধবার বিকেলে ঘোষণার কথা থাকলেও তা করতে পারেনি অধিদপ্তর। পরে রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয়েছে। ফল প্রস্তুত করে অধিকতর যাচাইয়ের জন্য পরামর্শ চেয়ে বিকেলে মহাপরিচালকের নেতৃত্বে একটি টেকনিক্যাল কমিটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) যায়। বুয়েটের পরামর্শ অনুসারে যাচাই-বাছাই শেষে রাতে ফল প্রকাশ করা হয়।
এদিকে ফলাফলে ত্রুটির কারণ খতিয়ে দেখতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) মোছা. নূরজাহান খাতুনকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে মোছা. নূরজাহান খাতুন বলেন, ‘ত্রুটির বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। প্রাথমিক তদন্তে কারও গাফিলতির প্রমাণ আমরা পায়নি। এটা নিছক কারিগরি ত্রুটির কারণে হয়েছে বলে ধারণা করছি।’
ফল জানবেন যেভাবে
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইট (www.dpe.gov.bd) এবং মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (www.mopme.gov.bd) থেকে বৃত্তি পরীক্ষার ফল জানা যাবে। এ ছাড়াও স্থানীয়ভাবে বিভাগীয় উপ-পরিচালকের কার্যালয়, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় এবং উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ফল পাওয়া যাবে। ঘরে বসে মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও ফল জানা যাবে।
মোবাইলে DPE স্পেস দিয়ে থানা/উপজেলা কোড, এরপর রোল নম্বর বসিয়ে স্পেস দিয়ে পরীক্ষার বছর টাইপ করে ১৬২২২ নম্বরে পাঠিয়ে দিলে ফিরতি এসএমএসে ফল জানিয়ে দেয়া হবে।