খুলনায় বিগত বছরের তুলনায় এবার হাট কম বসছে। একই সাথে কমেছে জবেহযোগ্য পশু লালন পালন। তবে চাহিদার তুলনায় বেশি প্রস্তুত রয়েছে পশুর। হাটগুলোতে পশুস্বাস্থ্য দেখভালে কাজ করছে প্রাণিসম্পদ অফিসের ২৮টি টিম। খামারীদের স্বার্থে ভারতীয় গরু আমদানী না করার আহবান জানিয়েছেন তারা।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, এ বছর জেলার ৯ উপজেলা এবং মহানগর মিলিয়ে হাট বসছে ২২টি। বিগত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে এই সংখ্যা ছিলো ২৬টি। এবছর হাট কম বসছে চারটি। জেলায় এ বছর কুরবানী যোগ্য পশুর সংখ্যা ৯২ হাজার ৩৭৫টি। বিগত এক বছর ধরে খামারীর এসব পশু লালন পালন করেছেন। এর মধ্যে গরু ২৬ হাজার ৪১৬, মহিষ ৩৬টি, ছাগল ৬৩ হাজার ৪৭৫ ও ভেড়া দুই হাজার ৪৩৮টি। জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৮৯ হাজার ৮৬৭টির। হিবেবে প্রায় তিন হাজার পশু বেশি আছে। বিগত বছর খুলনায় কুরবানীযোগ্য পশু প্রস্তুত করা হয়েছিলো ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৭৪টি। গেল ঈদে পশু কুরবানী করা হয় ৮৫ হাজার ৮৩৪টি। সেই হিসেবে এবার পশু প্রস্তুতি কম। খামারীরা বলছে, গেল বছর চড়া দামের কারণে পশু কুরবানী কম হয়েছে। এবছর সেই হারে দাম আরও বেশি। ফলে এবারও পশু কুরবানী কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন খামারী ও ক্রেতারা।
খামারিরা বলছেন,এ বছর গরুর দাম বেশি হওয়ায় কেনাবেচা কম হচ্ছে। ফলে লাভও কম হবে। তবে শেষ মুহূর্তে ভারতীয় গরু দেশে না এলে বেচাকেনা ভালোই হবে। দামও ভালো পাবেন তারা।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের দেয়া তথ্যমতে, জেলার ৯ উপজেলায় ২২টি হাটের মধ্যে ফুলতলায় ১, দিঘলিয়ায় ৪, তেরখাদায় ১, রূপসায় ২, দাকোপে ২, কয়রায় ২, পাইকগাছায় ৩, ডুমুরিয়ায় ৩, বটিয়াঘাটায় ৩ ও মহানগরীতে ১টি হাট বসবে। যেসব স্থানে হাটগুলো বসবে সেগুলো হচ্ছে, ফুলতলা হাট, যোগীপোল বালুর মাঠ, মোল্যাডাঙ্গা হাট, পথের বাজার, এমএ মজিদ কলেজ মাঠ, ইখড়ি গো হাট, রূপসা হাট, আমতলা হাট, চালনা বাজার, লাউডোব বাজার, ঘুগরাকাটি বাজার, বামিয়া, গদাইপুর বাজার, চাঁদখালী, কাশিম নগর, শাহপুর, খর্ণিয়া, আঠারো মাইল, আমিরপুর, কুঠিরহাট, বারোআড়িয়া ও জোড়াগেট। এসব হাটে পশু স্বাস্থ্য দেখভালে প্রাণিসম্পদ বিভাগের ২৮টি টিম কাজ করবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা ডা. এস এম আইয়ুব আলী বলেন, নিরাদ মাংসের জন্য সরকারের এ দপ্তরটি কাজ করছে। আমাদের পৃথক টিম মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। খামারীরা হাটে পশু তুলতে শুরু করেছে। দু/এক দিনের মধ্যেই বাজার জমে উঠবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে এবছর পশুর দাম অনেক বেশি বলে দাবি করেছেন খামারী ও ক্রেতারা। গতকাল কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, খামারিরা পশুর যতœ নিয়ে ব্যস্ত সময় যার করছেন। বাড়িতে বাড়িতে ফড়িয়ারা হানা দিলেও বাড়তি দামের আশায় হাটে নেয়া অপেক্ষা করছেন মালিকরা। পশু মোটাতাজাকরণে এবার আলু, খেসারির ডাল, মসুর ডাল, খড়, খৈল ও ধানের কুঁড়া খাইয়েছেন বলে দাবি করেছেন তারা। যেকারণে দাম বেশি পাবেন বলে আশা করছেন খামার মালিকরা।
ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা এলাকার খামারী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার খামারে ৪টি গরু আছে। সবগুলোই এবার কোরবানির হাটে তুলবো। এগুলো পাঁচ থেকে আট মণ ওজনের। ভারতীয় গরু দেশে না ঢুকলে ভালো দামে বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।
বটিয়াঘাটা উপজেলার খামারী মমিনুল ইসলাম বলেন, পশু পালন বেশ লাভজনক যদি ভালো দাম পাওয়া যায়। পশু খাদ্যের দাম বেড়েছে। এজন্য দাম বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নগরীর নিরালা এলাকার গরু কিনতে রাফসান রাফি বলেন, এবছর গরুর দাম বেশি। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির সাথে তাল মিলিয়ে চলা কঠিন। তার ওপর এত দাম দিয়ে কুরবানী করা আমাদের মত মধ্যবিত্তের জন্য কঠিন হবে।