রাশিয়ায় একটি যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হয়ে রুশ ভাড়াটে যোদ্ধাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনসহ ওই বিমানে থাকা ১০ যাত্রীর সবাই নিহত হয়েছেন।
মস্কো থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরে টিভার অঞ্চলে বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হয় বলে রাশিয়ান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
অ্যাসোসিয়েট প্রেসের খবরে বলা হয়েছে, ওই বিমানটিতে তিন পাইলট ও সাতজন যাত্রী ছিলেন। যাত্রীদের তালিকায় ওয়াগানার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের নাম ছিল বলে জানিয়েছে রাশিয়ার বেসামরিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণ সংস্থা রোসাভিয়েটসিয়া।
এ বিবৃতিতে রোসাভিয়েটসিয়া জানায়, যাত্রীদের তালিকায় ওয়াগনার প্রধান ছিলেন। তবে তিনি ওই ফ্লাইটে উঠেছিলেন কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
এর আগে ওয়াগনার-ঘনিষ্ঠ একটি টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন জানায়, মস্কোর উত্তরে টিভার অঞ্চলে বিমানটিকে গুলি করে নামায় রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী।
বিমানটি ভূপাতিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায় বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা তাস। ইতোমধ্যে দুর্ঘটনাকবলিত বিমানটি থেকে ৪ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে বিমান পরিবহন সংস্থাটির বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ওয়াগনার প্রধান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করেছে ওয়াগনার বাহিনী।
পূর্ব ইউক্রেনের বাখমুতে যখন রাশিয়ার সেনাবাহিনী কোনঠাসা, তখন ওয়াগনার সেনাদের ভূমিকায় বাখমুতের নিয়ন্ত্রণ নেয় রাশিয়া।
এরপর গত ২৩ জুন অস্ত্র সরবরাহ এবং যুদ্ধের নীতি-কৌশল নিয়ে ওয়াগনার প্রধানের সঙ্গে রাশিয়ার শীর্ষ কমান্ডারদের মতবিরোধ দেখা দেয়।
ওয়াগনার প্রধান সে সময় তার সেনাদের মরদেহের মাঝে দাঁড়িয়ে অস্ত্র সংকটের কথা জানান। বলেন, রাশিয়া চাহিদা অনুযায়ী অস্ত্র সরবরাহ করছে না। পরিস্থিতি না বদলালে তার সেনাদের যুদ্ধের ময়দান থেকে প্রত্যাহার করে নেবেন।
এ নিয়ে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও সামরিক প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভের সঙ্গে তার প্রকাশ্য বিরোধ সামনে আসে।
২৩ জুন তিনি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার সেনাদের ওপর বিমান হামলার অভিযোগ করেন। এর প্রতিবাদে রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বকে উৎখাতের জন্য ইউক্রেন সীমান্ত থেকে মস্কো অভিমুখে অভিযান শুরু করেন তিনি। পথে রোস্তভ-অন-দনসহ কয়েকটি শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেন ওয়াগনারের যোদ্ধারা। ওয়াগনারের নিয়ন্ত্রণে যায় গুরুত্বপূর্ণ একটি রুশ সেনাঘাঁটিও।
পরে ওয়াগনারের অগ্রযাত্রা এবং পুতিনের পাল্টা হুঁশিয়ারি মুখোমুখি সংঘাত অনিবার্য করে তোলে।
পরবর্তীতে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেন প্রিগোজিন।
বেলারুশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুতিনের সম্মতিতে তাদের সঙ্গে প্রিগোজিনের আলোচনা হয়েছে। লুকাশেঙ্কো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন। বিনিময়ে ওয়াগনার যোদ্ধাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়ার বিষয়ে মতৈক্য হয়।
বিদ্রোহের পর ওয়াগনার সেনারা বেলারুশে চলে যান বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর হয়। তবে প্রিগোজিনের অবস্থান নিয়ে সৃষ্টি হয় নতুন জল্পনা। শোনা যায়, তিনি বেলারুশে আছেন। এমনকি তার রাশিয়া সফর এবং পুতিনের সঙ্গে স্বাক্ষাত করার খবরও জানা যায়। কিন্তু, ওই ঘটনার পর থেকে কখনোই তাকে জনসম্মূখে আসতে দেখা যায়নি।