বিশ্বকাপে আজ নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে শক্তিশালী ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। এর আগে তিন ম্যাচ খেলে একটিতে জয় পেয়েছে টাইগাররা। তাই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চায় সাকিব বাহিনী। অন্যদিকে বিশ্বকাপের স্বাগতিক দেশ ভারত প্রথম তিন ম্যাচের প্রতিটিতে জয় তুলে নিয়েছে। আজ চতুর্থ জয়ের লক্ষ্য তাদের। পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে দুদলের ম্যাচটি বেলা আড়াইটায় শুরু হবে। এই ম্যাচের চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ বেতার।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বড় সুখবর- চোট কাটিয়ে আজ খেলছেন সাকিব আল হাসান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে গত ম্যাচে বাঁ ঊরুতে চোটগ্রস্ত হয়েছিলেন বাংলাদেশ দলের এই অধিনায়ক। গত বুধবার অনুশীলনে ফিরে নিজেকে ঝালিয়ে নেন এই বিশ্ব তারকা। কোনো অস্বস্তি বোধ করেননি। তাই তাকে আজকের ম্যাচে পাওয়া নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। এরই মধ্যে বাংলাদেশ গত দুই ম্যাচে টানা হেরে যাওয়ায় হতাশায় পুড়ছে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে ভারতের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প নেই লাল-সবুজের জার্সিধারীদের। জয়ের লক্ষ্য নিয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
যেমন ব্যাটিং, তেমন বোলিং- সব দিক থেকেই শক্তিতে বলীয়ান ভারত দল। এমন শক্তিশালী দলের বিপক্ষে জয় পেতে হলে নিজেদের সেরা ক্রিকেটটাই খেলতে হবে। অবশ্য এ জন্য সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। গত ম্যাচের হতাশা ভুলে পুনের মাঠে নতুন করে সূচনা চান টাইগাররা। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে বাংলাদেশের অনুপ্রেরণা নিকট অতীতের পারফরম্যান্স। গত এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। ওই টুর্নামেন্টের সুপার ফোর পর্বে এই ভারতকেই হারিয়েছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মাঠে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশের দেয়া ২৬৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ২৫৯ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল ভারত। বোলিংয়ে বাজিমাত করেন দুই পেসার মোস্তাফিজ ও নবীন তানজীম সাকিব। শেখ মেহেদী হাসানও ছিলেন পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল। এই জয় বিশ্বকাপে দলকে উজ্জীবিত করবে। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে মিরপুরের মাঠে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ভারতকে ২-১ এ হারিয়েছে বাংলাদেশ। ওই সিরিজ জয়ও আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে। আর সেটি কাজে লাগিয়েই ভারতকে আটকানোর লক্ষ্য বাংলাদেশের।
ভারতের বিপক্ষে সফল হতে হলে ব্যাটিংয়ে জ্বলে উঠতে হবে টাইগারদের। টপ অর্ডার কিছুতেই ভালো করছে না। উদ্বোধনী জুটি জমছে না। লিটনের ব্যাটে রান নেই। বারবার সুযোগ পেয়েও নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না নবীন ওপেনার তানজিদ তামিম। ব্যাটিং অর্ডারে রদবদল হওয়ায় স্বস্তিদায়ক পারফরম্যান্স দেখাতে পারছেন না ব্যাটাররা। ফলে স্কোর বোর্ডে রান উঠছে না।
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে খুবই কম রানে ইতি টানছে বাংলাদেশের ইনিংস। যে উইকেটে অন্য দলগুলো তিনশর বেশি রান সংগ্রহ করছে অহরহ, সেটা দেখাতে ব্যর্থ টিম বাংলাদেশ। এই ব্যাটিং ব্যর্থতা থেকে বেরিয়ে এসে ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেখাতে হবে সাকিবদের। এজন্য প্রস্তুত আছেন তারা। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে খেলে নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দেবেন টাইগাররা-এমন প্রত্যাশায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।
অন্যদিকে, পুনের উইকেট স্পিন-বান্ধব হতে পারে। তবে বোলিংয়ে বৈচিত্র্য এনে সফল হতে পারেন তাসকিনরাও। গত ম্যাচগুলোতে বাংলাদেশের পেসাররা পাওয়ার প্লেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেননি। নতুন বলে তাদের জ্বলে উঠতে হবে। দলকে ব্রেক থ্রু এনে দিতে হবে। দলের সেরা পেসার তাসকিন বোলিংয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখাতে পারছেন না। বিশ্বকাপের আগে খুবই ধারাবাহিক ভালো বোলিং করেছেন তিনি।
বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, বোলিং নিয়ে তাসকিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তারা। তাসকিনের বলে বাড়তি পেস ও সঠিক লেংথ দেখা যেতে পারে আজ। ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে দলের প্রধান অস্ত্র হলেন ডানহাতি পেসার তাসকিন।
বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানও জ্বলে উঠতে পারেন। অন্যদিকে, ভারতের বোলিংও বিধ্বংসী। জাসপ্রিত বুমরাহ, হার্দিক পান্ডিয়া ও মোহাম্মদ সিরাজ গত ম্যাচে ভালো খেলেছেন। বাংলাদেশের বিপক্ষেও তারা জ্বলে উঠতে পারেন। স্পিন শক্তিতেও এগিয়ে ভারত। ভারতীয় বোলারদের সামনে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটারদের।
আগে চারবার বিশ্বকাপ আসরে বাংলাদেশ ও ভারতের সাক্ষাৎ হয়েছিল। এর মধ্যে তিনবার জিতেছে ভারত এবং একবার জিতেছে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের আসরে ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিলেন টাইগাররা। এরপর ২০১১, ২০১৫ ও ২০১৯ সালের আসরে টানা জিতেছেন ভারতীয়রা। তাদের দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড ৩৭০ রান। বিপরীতে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের রেকর্ড ২৮৬। এ পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ ও ভারত মোট ৪০টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে ৩১টি ম্যাচে জয়ী হয়েছে ভারত। ৮টি ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। অপর ম্যাচের ফল হয়নি।