এবারের বিশ্বকাপে প্রায় অজেয় হয়ে উঠা ভারতকে বিশ্বকাপ ফাইনালে উড়িয়ে দিয়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। একতরফা খেলে তারা ম্যাচটি জিতেছে ৬ উইকেট আর ৪২ বল হাতে রেখে।
ওয়ানডে ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাত্তাই পায়নি ভারত। ট্রাভিস হেডের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে ফাইনাল ম্যাচে স্বাগতিকদের ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলেছে অজিরা।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে এদিন টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৪০ রান তোলে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৪৩ ওভারে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে প্যাট কামিন্স বাহিনী। দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ম্যাচসেরা হয়েছেন ট্রাভিস হেড।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারেই ১৫ রান তোলেন দুই অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। তবে দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই ৩ বলে ৭ রান করে সাজঘরে ফেরেন ওয়ার্নার।
এরপর ওয়ানডাউনে নেমে ঝোড়ো শুরু করলেও টিকতে পারেননি মিচেল মার্শ। ফেরেন ১৫ বলে ১৫ রান করে। আরেক অভিজ্ঞ ব্যাটার স্টিভেন স্মিথ আউট হন ৯ বলে ৪ রান করে। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে অজিরা।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে এই চাপ সামাল দিতে থাকেন ট্রাভিস হেড। চতুর্থ উইকেটে তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন মার্নাশ লাবুশেন। সাবলীল ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তারা। এর মাঝে ফিফটি তুলে নেন হেড। ফিফটি তুলে নিয়ে সেঞ্চুরির দিকে ছুটাতে থাকেন তিনি।
অপরদিকে ধীরগতিতে ব্যাটিং করে ফিফটির দিকে এগুতে থাকেন লাবুশেন। ৯৯ বলে ফিফটি পূরণ করেন তিনি। এর আগে তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারের দেখা পান হেড। ৯৫ বলে পূর্ণ করেন আসরের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
ভারতের বিপক্ষে যা তার প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। একই সঙ্গে রিকি পন্টিং ও অ্যাডাম গিলক্রিস্টের পর তৃতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনালে সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করেন হেড। তবে দলের জয়ের জন্য ২ রান বাকি থাকতে ১২০ বলে ১৩৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে আউট হন এই ওপেনার।
এরপর উইকেটে এসে প্রথম বলে ২ রান নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আর অপর প্রান্তে লাবুশেন অপরাজিত থাকেন ১১০ বলে ৫৮ রান করে।
ভারতের হয়ে ২টি উইকেট নেন জাসপ্রিত বুমরাহ। আর ১টি করে উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ শামি ও মোহাম্মদ সিরাজ।
এর আগে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেন ওপেনার ও অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তবে তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি আরেক ওপেনার শুভমান গিল। দলীয় পঞ্চম ওভারে ৩০ রানের মাথায় আউট হন তিনি। ফেরার আগে ৭ বলে ৪ রান করেন গিল।
এরপর ওয়ানডাউনে নামা বিরাট কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে এগুতে থাকেন রোহিত। শুরু থেকেই মারমুখী ছিলেন তিনি। তবে তাকে থামতে হয় ফিফটির আগেই। সাজঘরে ফেরার আগে খেলেন ৩১ বলে ৪৭ রানের ইনিংস।
দলের প্রয়োজনে হাল ধরতে পারেননি দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ব্যাটার শ্রেয়াশ আইয়ার। চারে নেমে ৩ বলে ৪ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি। মাত্র ৫ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারানোর পর থেমে যায় ভারতের রান তোলার গতি।
এরপর সাবধানী ব্যাটিংয়ে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কোহলি। আর তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার লোকেশ রাহুল। বাউন্ডারি না পেলেও নিয়মিত সিঙ্গেল নিতে থাকেন তারা দুজন। এদিকে ৫৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি। তবে হাফ সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেন তিনি। ৬৩ বলে ৫৪ রান করে বোল্ড আউট হন কোহলি। তাতেই নতুন এক মাইলফলক স্পর্শ করেন ভারতীয় এই ব্যাটার৷ ৭৬৫ রান করে বিশ্বকাপের ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ রানের মালিক হন কোহলি।
এরপর রাহুলকে সঙ্গ দিতে আসেন রবীন্দ্র জাদেজা। তবে এই জুটিও থিতু হতে পারেনি বেশিক্ষণ। ২২ বলে ৯ রান করে ফিরে যান জাদেজা। রাহুলও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার পর ১০৭ বল মোকাবিলায়৬৬ রান করে ফিরেছে তিনি।
দলের হাল ধরতে পারেননি মিডল অর্ডার ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব। তিনি আউট হন ২৮ বলে মাত্র ১৮ রান করে। এর আগে ৬ রানে আউট হন মোহাম্মদ শামি। জাসপ্রিত বুমরাহ ফেরেন ১ রানে। শেষ দিকে কুলদ্বীপ যাদবের ১০ ও মোহাম্মদ সিরাজের ৯ রানের সুবাদে কোনরকমে ২৪০ রানের সংগ্রহ পায় ভারত।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৫৫ রা খরচায় সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক। ২টি করে উইকেটের দেখা পান প্যাট কামিন্স ও জস হ্যাজলেউড। আর ১টি করে উইকেট শিকার করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও অ্যাডাম জাম্পা।