শিরোনাম :

২৫ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি অনাবাদী, এক লাখ ২৫ হাজার টন ধান উৎপাদন বাড়বে

২৫ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি অনাবাদী, এক লাখ ২৫ হাজার টন ধান উৎপাদন বাড়বে
Admin

শাল্লার কান্দিগাঁও গ্রামের বড় কৃষক ছত্তার মিয়ার ১০ একর জমি ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চাষাবাদ করেন না। এর আগে এসব জমিতে বোরো আবাদ করতেন তিনি। পলি ভরাট হয়ে আবাদযোগ্য এই জমি অনাবাদী হয়ে এখন পতিত থাকছে। ভরাট হয়ে অবস্থা এমন হয়েছে, না বোরো, না আমন কোন মৌসুমের ধানের চাষই করা যাচ্ছে না এসব জমিতে। ছত্তার মিয়া বললেন, কান্দিগাঁও মৌজার চান্দাকোণা বন্দের এসব জমি উদ্যোগী হলেই চাষাবাদ সম্ভব। গভীর নলকূপ বসিয়ে দেশের অনেক স্থানেই এধরনের জমিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে। তিনি জানালেন, চান্দাকোণা হাওরে ১০০ একরের মতো জমি এভাবে অনাবাদী আছে। গভীর নলকূপ বসিয়ে এই জমি চাষাবাদের আওতায় নিতে ৩০ লাখ টাকার মতো ব্যয় হবে। এককভাবে বা যৌথভাবেও কৃষকদের পক্ষে এই টাকা খরচ করা সম্ভব নয়। বিএডিসি গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। জমি আবাদের ব্যবস্থা করে দিয়ে তারা (বিএডিসি) প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকাও কৃষকদের কাছ থেকে নিতে পারে।
দিরাইয়ের তাড়ল ইউনিয়নের বাউশি মৌজার খামারখালে ১০০ একরের মতো জমিতে সেচের অভাবে চাষাবাদ হয় না। স্থানীয় বড় কৃষক আব্দুস ছাত্তার বললেন, গভীর নলকূপ হলেই এই জমি চাষাবাদ করা সম্ভব। কৃষকদের পক্ষে ব্যয়বহুল এই কাজ করা সম্ভব নয়। বিএডিসি বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কৃষকদের সম্পৃক্ত করে এসব জমি চাষাবাদের উদ্যোগ নিতে পারে।
কেবল শাল্লার কান্দিগাঁও ও দিরাইয়ের বাউশিতে নয় জেলাজুড়ে আবাদযোগ্য অনাবাদী জমির পরিমাণ প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর। এই জমি চাষাবাদের আওতায় আসলে সুনামগঞ্জে ধানের উৎপাদন আরও অনেক বেড়ে যাবে। কৃষি অফিসের হিসাব মতে অনাদাবাদি জমিতে কেবল ধান চাষাবাদ করলে, ধানের উৎপাদন বাড়বে এক লাখ ২৫ হাজার টন। যে পরিমাণ ধান দেশের অনেক জেলায় উৎপাদনই হয় না।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দুই বছর আগেও জেলায় ২৮ হাজার হেক্টর আবাদযোগ্য জমি অনাবাদি ছিল। প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমি গেল দুই বছরে চাষাবাদের আওতায় এসেছে। বাকী ২৫ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে রবি মৌসুমে অনাবাদী থাকছে ১৬ হাজার হেক্টর। যে জমিতে বোরো ধান, গম, ভুট্টা, সরিষাসহ শীতকালীন সবজি চাষাবাদ সম্ভব।
আবার খরিপ-১ ও খরিপ-২ মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি থাকছে। যে জমিতে আউশ, রোপা আমন, পাট, বাদামসহ শাকসবজী চাষাবাদ করা সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক বিমল কুমার সোম বললেন, খাল খনন, নদী খনন, গভীর নলকূপ, পাওয়ার পাম্প, ফিতা পাইপ, বারিড পাইপ ব্যবহার করে অনাবাদি এই জমি চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব। তবে এজন্য কৃষকদের প্রণোদনা দিতে হবে। বিনামূল্যে বীজ-সার সরবরাহ করতে হবে। বিএডিসিকে এজন্য উদ্যোগী হতে হবে।

বিএডিসির সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রণজিৎ দেব বললেন, সুনামগঞ্জে আবাদযোগ্য জমি যেমন দেশের অন্য যেকোন জেলার চেয়ে বেশি। আবাদযোগ্য অনাবাদি জমিও বেশি। সেচের ব্যবস্থা হলেই এসব জমি চাষাবাদের আওতায় আসবে। বিএডিসি সুনামগঞ্জের এসব জমিসহ সিলেট বিভাগের অনাবাদি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য ১০০ কিলোমিটার খাল খনন, ৫০ কিলোমিটার পুরোনো খাল সংস্কার, ৩০ টি হর্স পাওয়ার বসানো, ২০০ টি লো লিপ্ট পাম্প, হাওর থেকে ফসল ঘরে আনার জন্য ২০০ কিলোমিটার গোপাটসহ ১৫ শ’ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের যাচাই বৈঠকে এর অনুমোদনও হয়েছে। কিছু সংশোধন করে এই প্রকল্প প্রস্তাবনা একনেক’এ অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে শীঘ্রই পাঠানো হবে। একনেক’এ অনুমোদন হলে এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের পরবর্তী কাজ শুরু হবে।