ইকুয়েডরে জরুরি অবস্থা জারির পরপরই দেশজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত দশজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট দানিয়েল নোবোয়া চলমান পরিস্থিতিকে ‘অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সংঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন বলে আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে।
এর আগে দেশটির একটি টেলিভিশনের লাইভ অনুষ্ঠানে স্টুডিওতে ঢুকে পড়েন কয়েকজন বন্দুকধারী। সেখান থেকে তারা সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করেন ও নিরাপত্তারক্ষীসহ স্টুডিওতে উপস্থিত সবাইকে হত্যার হুমকি দেন। দেশটির গুয়াইয়াকিল শহরে টিসি নামের একটি টেলিভিশন স্টেশনে মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে।
ওই সময় বন্দুকধারীরা সংবাদকর্মীদের মাটিতে শুয়ে পড়তে বাধ্য করেন। একজনকে চিৎকার করতে শোনা যায়, ‘গুলি করো না, দয়া করে আমাদের গুলি করো না।’ তখনও লাইভ সম্প্রচার অব্যাহত ছিল।
প্রায় আধঘণ্টা বিশৃঙ্খলার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের স্টুডিওতে প্রবেশ করতে দেখা যায়। সেখান থেকে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রশাসন।
ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘এ গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিরোধ করতে আমি সশস্ত্র বাহিনীকে সামরিক অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছি।’
মূলত দেশটির দুর্ধর্ষ মাদক চক্র ‘লস কোনেরস’-এর হোতা হোসে অ্যাদলফো মাকিয়াস ওরফে ‘ফিতো’ কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ায় সোমবার ৬০ দিনের জরুরি অবস্থা জারি করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট দানিয়েল নোবোয়া। সেইসঙ্গে দেশজুড়ে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়।
ইকুয়েডরের বন্দর নগরী গুয়াইয়াকিলের লা রেজিওনাল কারাগারে ৩৪ বছরের সাজা ভোগ করছিলেন ফিতো।
মঙ্গলবার গুয়াইয়াকিল কারাগারে আট বন্দি ও দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর দেশজুড়ে সশস্ত্র অভিযান শুরু করে সন্ত্রাসীরা। হামলায় প্রাথমিকভাবে তিনজন আহত হওয়ারও খবর পাওয়া যায়।
নেতাকে জেলে পাঠানোর প্রতিশোধ হিসেবে সন্ত্রাসীরা দেশটির বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে জিম্মি করে এবং কয়েকটি শহরে বিস্ফোরণ ঘটায়।
দেশটির প্রশাসন জানিয়েছে, আটটি প্রদেশে অন্তত ২৩ জায়গায় সহিংস ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি স্থানে গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। পুলিশের গাড়িগুলো আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বলে রাজধানী কিটো থেকে জানিয়েছেন আল জাজিরার সংবাদকর্মী আলেসান্দ্রো রামপিয়েতি।
ইকুয়েডরের বৃহত্তম উপকূলীয় শহর গুয়াইয়াকিলকে দেশটির সবচেয়ে বিপজ্জনক শহর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একাধিক বন্দর থাকায় শহরটি মাদক চোরাচালানের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
দক্ষিণ আমেরিকার এ দেশটিতে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা দমনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে দেশটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন দানিয়েল নোবোয়া। দেশের সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এটিই তার প্রথম বড় পরীক্ষা।