শিরোনাম :

শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাতি

শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছে জাতি
Admin

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে জাতির পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ বাজানো হয়।

এরপর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও সংস্থার শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রাত সাড়ে ১২টার দিকে জনসাধারণের জন্য শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পরে একে একে শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের মানুষ।

রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দীর্ঘ লাইন ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হয়ে পলাশী মোড় ও নীলক্ষেতের দিকে চলে যায় লাইন। সকালে অসংখ্য মানুষকে ফুল হাতে শহীদ মিনারের দিকে যেতে দেখা যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তারা।

করোনা মহামারির কারণে এর আগে গত দুই বছর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তাদের সামরিক উপদেষ্টা। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। তাই দুই বছর পর এবার একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সশরীরে শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রধান হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এরপর ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। স্পিকারের পর ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু শ্রদ্ধা জানান। বিরোধী দলের নেতার পক্ষে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের পর শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, বিমান বাহিনীর প্রধান শেখ আব্দুল হান্নান ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল শাহিদ ইকবাল।

প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল নাজমুল হাসান। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানান র্যাব ফোর্সেসের মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন। যোদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধারা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

১৪ দলের নেতৃবৃন্দ শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন হাসানুল হক ইনু, অ্যাডভোকেট আফজাল, অসীম কুমার উকিল প্রমুখ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস শ্রদ্ধা জানান। চিফ হুইপের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন হুইপ ইকবালুর রহীম। এরপর বাংলাদেশে অবস্থিত কূটনৈতিক মিশনের প্রধানবৃন্দ, রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনাররা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) কোষাধ্যক্ষ, অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ এবং সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজামুল হক ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদাসহ অন্য নেতারা শ্রদ্ধা জানান। পরে শ্রদ্ধা জানাতে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ।

২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন। অর্ধনমিত রাখা হয়েছৈ জাতীয় পতাকা। একই সঙ্গে সর্বত্র ওড়ানো হচ্ছে শোকের কালো পতাকা। সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারে ভাষা দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্র ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হচ্ছে।

পাকিস্তানি সরকার মায়ের ভাষা বাংলাকে কেড়ে নিয়ে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল উর্দু। কিন্তু তা মানতে পারেনি বাঙালি। ১৯৫২ সালের সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালি দেখিয়েছে প্রতিবাদের স্পর্ধা। ১৪৪ ধারা ভেঙে মায়ের ভাষা বাংলাকে রক্ষায় সেদিন রাজপথে নেমেছিলেন ছাত্রছাত্রী ও অজস্র তরুণ। তাদের শাণিত মিছিল ঠেকাতে অকাতরে গুলি চালায় পাকিস্তানিরা। পলাশ ফোটার দিনে বুকের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ।

প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয় মায়ের ভাষা বাংলা। তাই দিনটি যেমন গৌরবের ও অহংকারের, তেমনি শোকেরও। বাঙালি ছাড়া, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো জাতিকে ভাষা রক্ষায় প্রাণ দিতে হয়নি। তারই স্বীকৃতি হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি।

বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানায়। আর এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পায় অমর একুশে। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে।