শিরোনাম :

২৪ ঘণ্টায় সড়কে ঝরলো ২০ প্রাণ

২৪ ঘণ্টায় সড়কে ঝরলো ২০ প্রাণ
Admin

দেশের ছয় জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে যশোরের সাতজন, টাঙ্গাইলের পাঁচজন, গাইবান্ধার চারজন, রাজবাড়ীর একজন, খুলনার একজন, সাতক্ষীরার একজন ও হবিগঞ্জের একজন। শুক্রবার (৭ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে দিনগত রাত ১২টার মধ্যে এসব পৃথক দুর্ঘটনা ঘটে। জাগো নিউজের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য তুলে ধরা হলো।

যশোর

শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সদর উপজেলায় বাসচাপায় ইজিবাইকের ছয় যাত্রীসহ সাতজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একই পরিবারের তিনজন আছেন। যশোর-মাগুরা মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- ইজিবাইক চালক যশোর সদরের সুলতানপুরের সাইফুলের ছেলে ইমরান হোসেন (২৭), বাঘারপাড়ার যাদবপুরের হেলালের যমজ ছেলে হোসেন ও হোসাইন (২), তার মেয়ে খাদিজা (৭) ও একই গ্রামের বাবুল মুন্সির স্ত্রী ফাহিমা খাতুন (৩০)। বাকি দুজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

জাহাঙ্গীর হোসেন নামের স্থানীয় এক দোকানি বলেন, যশোর থেকে একটি ইজিবাইক সাতজন যাত্রী নিয়ে লেবুতলা বাজারের দিকে যাচ্ছিল। তেঁতুলতলা এলাকায় পৌঁছালে ইজিবাইকটি ডানে একটি বাইপাস সড়কে নামতে যায়। এসময় ইজিবাইকের পেছনে থাকা একটি বাস চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ছয়জন মারা যান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন সড়ক দুর্ঘটনায় সাতজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, লেবুতলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ইজিবাইক চালকসহ সাতজন নিহত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। বাস ও ইজিবাইকটি জব্দ করা হয়েছে।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আসিফ মোহাম্মদ আলী হাসান বলেন, মরদেহগুলো হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

টাঙ্গাইল

জেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নারী ও শিশুসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১২ জন।

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের রাবনায় এলাকায় কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে পিকআপের সংঘর্ষে তিনজন ও বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় এক নারী ও বাসাইলে এক শিশু নিহত হয়েছে।

নিহতদের মধ্যে চারজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- জেলার গোপালপুর উপজেলার হযরত আলীর ছেলে শাহ আলম (৪০), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গোয়াকড়া গ্রামের হামিদ মিয়ার ছেলে শাহান শাহ (২৫) এবং নুরজাহান (৪৫)। তারা সবাই পিকআপ ভ্যানের যাত্রী ছিলেন। এছাড়া বাসাইলে মোটরসাইকেলে নিহত শিশু ফারজানা (৩) ফুলকী ইউনিয়নের নেদার পশ্চিম পাড়া গ্রামের বাদলের মেয়ে।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের পুলিশ বক্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, বিকেলে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্য স্বামীর সঙ্গে একটি পিকআপে করে রওনা হোন সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গোয়াকড়া গ্রামের হামিদ মিয়ার ছেলে শাহান শাহ (২৫) এবং নুরজাহান (৪৫)। পিকআপ ভ্যানটি ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের রাবনা বাইপাস এলাকায় পৌঁছালে একই দিক থেকে আসা একটি কাভার্ডভ্যান তাদের গাড়িটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে পিকআপে থাকা প্রায় ১৫ যাত্রী আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে সন্ধ্যায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনজনের মৃত্যু হয়।

অপরদিকে, একই মহাসড়কে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় অজ্ঞাত বাসচাপায় এক নারী ও বাসাইলে মোটরসাইকেলচাপায় ফারজানা (৩) নামের এক শিশু মারা যায়।

গাইবান্ধা

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় চারজন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের কোমরপুর এলাকায় ও দিনগত রাত ১২টার দিকে বালুয়া বাজার এলাকায় দুর্ঘটনা দুটি ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা থেকে শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস রংপুর যাচ্ছিল। অপরদিকে যাত্রীবাহী একটি ট্রাক ঢাকা যাচ্ছিল। পথে বালুয়া বাজার এলাকায় বাস ও ট্রাকটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৩০ জন।

খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা চালান। তারা আহতদের উদ্ধার করে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন।

গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে দুর্ঘটনার শিকার বাস ও ট্রাকটি মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নিহতদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।

অপরদিকে সকালে যাত্রীবাহী একটি পিকআপ রংপুরের দিকে যাচ্ছিল। কোমরপুর এলাকায় যাত্রীবাহী একটি বাস পিকআপটিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে পিকআপে থাকা বেলাল হোসেন (২০) মহাসড়কের ওপর ছিটকে পরেন। এ সময় বাসটির চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

ঘাতক বাসটি পালিয়ে গেলেও বিক্ষুব্ধ জনতা একই কোম্পানির বাস মনে করে রংপুরমুখী হানিফ পরিবহনের একটি বাস আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন।

গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, কোনো অভিযোগ না থাকায় নিহত যুবকের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

রাজবাড়ী

সদর উপজেলার উড়াকান্দায় বালুবাহী ডাম্পট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংর্ঘষে বিজয় মোল্লা (১৭) নামে এক কিশোর নিহত হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত বিজয় মোল্লা রাজবাড়ী পৌরসভার নিউ কোলনী এলাকার রহমান মোল্লার ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, মোটরসাইকেল আরোহী রাজবাড়ী থেকে উড়াকান্দার দিকে যাচ্ছিল। পথে বালুবাহী ডাম্পট্রাকের সঙ্গে সংর্ঘষ হয়। এতে ট্রাকটি উল্টে পাশের খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী বিজয়ের মৃত্যু হয়। এ সময় আহত হয়েছেন আরও দুজন মোটরসাইকেল আরোহী। ঘটনার পর কৌশলে পালিয়েছেন ট্রাকচালক। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক ও মোটরসাইকেল জব্দ করে।

রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাদত হোসেন দুর্ঘটনায় একজন নিহতের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

খুলনা

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর লবণচরা থানাধীন বিশ্বরোড এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গৃহবধুর (৩০) মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন তার স্বামী। তবে হতাহতের পরিচয় তাৎক্ষণিক জানাতে পারেনি পুলিশ।

এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে লবণচরা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সাইদুর বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে জিরোপয়েন্টের দিকে যাচ্ছিল ওই দম্পতি। পেছন থেকে বিআরটিসির একটি বাস মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। মোটরসাইকেল থেকে চালকের স্ত্রী রাস্তায় পড়ে গেলে বাসটির চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

এসআই আরও বলেন, ওই নারীর স্বামী গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার অবস্থাও গুরুতর। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা

কলারোয়া উপজেলায় নানাবাড়ি বেড়াতে এসে মামাতো ভাইয়ের নতুন মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে আফজাল হোসেন (১৯) নামের এক কলেজছাত্র নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন তার মামাতো ভাই বাবু। রাত ৯টার দিকে উপজেলার গোয়ালচাতর চৌরাস্তা মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত আফজাল একই উপজেলার কুশোডাঙ্গা ইউনিয়নের কলাটুপি গ্রামের মাহমুদুল হকের ছেলে। তিনি এবছর এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আফজাল হোসেন কয়েক দিন আগে নানাবাড়ি বেড়াতে আসেন। শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তার মামাতো ভাইয়ের নতুন মোটরসাইকেলে দুজনে ঘুরতে বের হন। গোয়ালচাতর চৌরাস্তা মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যানের সঙ্গে তাদের মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এ সময় স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় আফজালকে উদ্ধার করে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

হবিগঞ্জ

চুনারুঘাট উপজেলায় বালুবোঝাই ট্রাক্টর উল্টে আল-আমিন (২৫) নামে এক মাটিকাটা শ্রমিক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার কচুয়া গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আল-আমিন ওই গ্রামের জহুর হোসেনের ছেলে।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, নিহত আল-আমিন ট্রাক্টরে বালু নামানো-ওঠানো শ্রমিকের কাজ করতেন। কচুয়া গ্রাম থেকে ট্রাক্টরে বালু বহন করে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাক্টরটি উল্টে যায়। এ সময় ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়ে তিনি আহত হন।

ওসি আরও বলেন, তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সংবাদ ও ছবি সূত্রঃ জাগোনিউজ২৪.কম